সনাতন ধর্ম বিশ্বমানবতার ধর্ম ও একমাত্র ঐশ্বরিক সংবিধান বেদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত । বেদ ও বেদানুকূল শাস্ত্রে সনাতন ধর্মের বিধিবিধান যে শ্রুতি-স্মৃতি-সদাচার-প্রিয়াত্মনের ন্যায়দণ্ডে স্থাপিত হয়েছে তাতে কোন পক্ষপাত বা ভেদাভেদ নেই । এখানে কেউ জন্মগতভাবে বা জাতিগতভাবে অভিশপ্ত কিংবা অনন্তকাল শাস্তিভোগী নয় । বৈদিক সনাতন ধর্ম প্রকৃত ❝অধর্মস্তথহিত ❞ হিংসা অধর্ম এবং অহিতকর । অহিংসার শিক্ষা দেয় ❝অহিংসা পরম ধর্ম❞ সেখানে কোনো একক সাম্প্রদায়িক ভিত্তিক শাস্তির বিধান নেই বরং যারা কিনা মানবতা বিরোধী এবং রাক্ষস স্বভাববিশিষ্ট , ঠগ , লুণ্ঠনকারী , হিংসক , চোর , মদ্যপ , ব্যভিচারী প্রভৃতি দুষ্টজন তথা সমাজের ক্ষতি কারক ইত্যাদি ব্যক্তি সমূহের কিরূপ শাস্তির বিধি-বিধান স্পষ্টতঃভাবে বর্ণীত রয়েছে এবং নিরীহ প্রাণী হত্যা অযোগ্য , তাদের বধ না করতে , পাশপাশি অত্যাচার করতেও বারণ করা হয়েছে । বৈদিক সনাতন ধর্মে সমাজ ব্যবস্থা কেবল মানুষের কল্যাণের নিমিত্তে এবং তাতে অনুপম যে মানবীয় ও নৈতিক গুণাবলীর সমাবেশ রয়েছে তা অতুলনীয় ।
বেদ আমাদের মানবতা এবং ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় , একে অপরের সঙ্গে তথা সকল প্রাণীর প্রতি মিত্র ভাব রাখার শিক্ষা দেয় , সকল মানুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা দেয় , একে অপরের সঙ্গে মিলে মিশে থাকার শিক্ষা দেয় , অহিংসার শিক্ষা দেয় , ❝বসুধৈব কুটুম্বকম❞ আমরা এক জাতি , এক পরিবার ও এক মানবতার ধর্মের শিক্ষা দেয় । ❝ যুযোধ্যস্মদ্ দ্বেষাংসি❞ [ঋগ্বেদ-২.৬.৮] হে পরমেশ্বর ! আমাদের হৃদয় থেকে ঈর্ষা , দ্বেষ , বৈরী ভাবকে দূর করো ।

সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবো মনাংসি জানতাম্ ৷
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে ॥
[ঋগ্বেদ ১০.১৯১.২]
বঙ্গানুবাদঃ— হে মনুষ্য ! তোমরা একসঙ্গে চল , একসঙ্গে মিলে আলোচনা কর , তোমাদের মন উত্তম সংস্কারযুক্ত হোক ৷ পূর্ব্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করেছেন তোমরাও সেই রূপ করো ৷

পরমেশ্বর আমাদের একসাথে চলতে উপদেশ দিচ্ছেন । নির্দেশ দিচ্ছেন পরস্পরের প্রতি অসহিষ্ণু , অন্যায়কারী এবং স্বার্থপর না হয়ে জ্ঞান , ধীশক্তি ও ভালবাসা বৃদ্ধি/ প্রবলতর করার জন্য , একত্রে কাজ কর জ্ঞান ও কল্যান বৃদ্ধির জন্য ৷ পুণ্যবান ব্যক্তির সত্যনিষ্ট ও নিঃস্বার্থ পথ অনুসরণ করা উচিৎ ।
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহচিত্ত মেষাম্ ৷ সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি ॥
[ঋগ্বেদ ১০.১৯১.৩]
বঙ্গানুবাদঃ— তোমাদের সকলের মত এক হোক , মিলন ভুমি এক হোক , মন এক হোক , সকলের চিত্ত সম্মিলিত হোক , তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্ত করেছি , তোমাদের সকলের জন্য অন্ন ও উপভোগ একই প্রকারের দিয়েছি ৷

পরমেশ্বর নির্দেশ দিচ্ছেন , তুমি অবশ্যই ভুল ও সঠিক নির্ণয় করবে পক্ষপাত্ত্বিত দূষণ হতে মুক্ত হয়ে । তোমরা সকলে সংগঠিত হবে সকলের সুস্বাস্থ্য , জ্ঞান এবং মঙ্গল বৃদ্ধিলাভের জন্যে । তোমাদের মন অবশ্যই হতে হবে ঘৃণা বর্জিত এবং সকলের সমৃদ্ধি ও সুখকে নিজের সুখ ও সমৃদ্ধি বলে মনে করবে এবং সত্যের ভিত্তিতে তোমরা শুধু কাজ করে যাও সুখ শান্তি বৃদ্ধির জন্যে । তোমরা একত্রে কাজ কর মিথ্যাকে দূর করার জন্য এবং সত্যকে উদ্ঘাটন করার জন্য । কখনই একতা ও সত্য-ন্যায়ের পথ থেকে সরে যাবে না ।
সমানীব আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ ৷
সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সু সহাসতি ॥
[ঋগ্বেদ ১০.১৯১.৪]
বঙ্গানুবাদঃ— তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হোক , তোমাদের হৃদয় সমান হোক , তোমাদের মন সমান হোক ৷ এই ভাবে তোমাদের সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক ।

পরমেশ্বর উপদেশ করছেন , তোমাদের প্রচেষ্টা হতে হবে উদ্যম পূর্ণ ও সকলের মঙ্গলের জন্য । তোমার আবেগ হবে সকলের জন্য এবং সকলকে সেই ভাবেই ভালবাসো যেভাবে তুমি নিজে নিজেকে ভালবাসো । তোমার ইচ্ছা , মীমাংসা , বিশ্লেষণ, বিশ্বাস , মিথ্যাচার , ধৈর্য , উৎসাহ , কেন্দ্রবিন্দু , সুখ , স্বাচ্ছন্দ্য ইত্যাদি সকল কিছু হতে সত্যের প্রতি এবং সকলে মঙ্গলে প্রতি , এবং অবশ্যই অসত্য বর্জিত হয়ে । একে অপরের জ্ঞান ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির জন্য ক্রমাগত একত্রে কাজ করে যাও ।
জ্যায়স্বন্তশ্চিত্তিনো মা বি যৌষ্ট সংরাধয়ন্তঃ সধুরাশ্চরন্তঃ । অন্যো অন্যস্মৈ বলগু বদন্ত এত সধ্রীচীনাস্বঃ সংমনস্কৃণোমি ॥
[অথর্ববেদ ৩.৩০.৫]
বঙ্গানুবাদঃ- তোমরা জ্যেষ্ঠদের সন্মান করো । তোমরা বিচারশীল সাধক একই বন্ধনের নীচে আবদ্ধ হয়ে চলছো । তোমরা পৃথক হইও না । একে অন্যের সঙ্গে মনোহর কথাবার্তায় অগ্রসর হও । তোমাদেরকে একই পথের পথিক ও উত্তম মন বিশিষ্ট করেছি ।
সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজমি । সমঞ্চোহগ্নিং য়পর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ ॥
[অথর্ববেদ ৩.৩০.৬]
বঙ্গানুবাদঃ- হে মানব ! তোমাদের পান একসঙ্গে হোক , আহার একসঙ্গে হোক । তোমাদের সবাইকে একসঙ্গে একই বন্ধনে যুৃক্ত করেছি । সকলে মিলে পরমাত্মার পূজা কর । রথচক্রের কেন্দ্রের চারদিকে যেমন অর থাকে তোমরাও সেইভাবে থাক ।
সঘ্রীচীনাম্বঃ সংমনসস্কৃণোম্যেকশষ্টীস্তুসংবননেন সর্বান্ ।
দেবা ইবাহ মৃতং রক্ষমাণাঃ সায়ংপ্রাতঃ সৌমনসো বো অস্ত ॥
[অথর্ববেদ ৩.৩০.৭]
বঙ্গানুবাদঃ- তোমরা সৎভাবে একই পথে অগ্রসর হও , চিত্ত তোমাদের উন্নত হোক , পানাহার তোমাদের এক সঙ্গে হোক -আমি তোমাদের জন্য এইরূপ ব্যবস্থাই করেছি । অমৃত রসে আপ্লুত বিদ্বানগণদের ন্যায় প্রাতে ও সায়ংকালে তোমাদের চিত্ত প্রসন্ন হোক ।
মা ভ্রাতা ভ্রাতরং দ্বিক্ষন্মা স্বসারমুত স্বসা ।
সম্যঞ্চঃ সব্রতা ভূত্বা বাচং বদত ভদ্রয়া ॥
[অথর্ববেদ – ৩।৩০।৩]
বঙ্গানুবাদঃ- হে মানব ! তোমরা ভাই ভাইকে এবং বোন বোনকে কখনও দ্বেষ কোরো না । তোমরা সকলে এক মতালম্বী এবং একব্রতী হয়ে কল্যাণকর রীতির মাধ্যমে একে অপরের শুভবাণী বলো ।
দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভুতানি সমীক্ষন্তাম্ ৷
মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভুতানি সমীক্ষে ৷ মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে ॥
[যজুর্বেদ ৩৬.১৮]
বঙ্গানুবাদঃ- হে দুঃখনাশক পরমাত্মা ! আমাকে সুখের সহিত বর্ধন কর , আমাকে সকল প্রাণী মিত্রের দৃষ্টিতে দেখুক , মিত্রের দৃষ্টিতে আমি সকল প্রাণীকে দেখি । মিত্রের দৃষ্টিতে যেন আমরা পরষ্পরকে দেখি ।
মানুষ কখনই কোন কাউকে ঘৃণা করা উচিত নয় , মায়া ও মমতার সহিত তাদের সাথে আচরণ করা উচিৎ । মানুষ সকল প্রাণীকে নিজের বন্ধু হিসেবে গণ্য করবে এবং প্রত্যেকের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করবে ।
তে অজ্যেষ্ঠা একনিষ্ঠাস উদ্ভিদো হমধ্যমাসেঃ মহসা বি বাবৃধুঃ । সুজাতাসো জনুষুঃ পৃশ্নি মাতরা দিবো মর্য্যা আনোঅচ্ছা জিগতন ॥
[ঋগ্বেদ ৫.৫৯.৬]
বঙ্গানুবাদঃ- মানবের মধ্যে কেহ বড় নয় , কেহ ছোট নয় , কেহ মধ্যম নয় তারা সকলেই উন্নতি লাভ করছে । জন্ম হতে তারা কুলীন । তারা জন্মভূমি সন্তান দিব্য মনুষ্য । তোমরা সত্য পথে আমার [ ঈশ্বরের ] নিকট আগমন করো ।
তাংরুতুদঃ স্যাদার্তোপি ন পরদ্রোহকর্মধীঃ । য়য়াস্যাদ্বিজতে বাচা নালোক্যাং তামুদীরয়েত্ ॥
[মনুস্মৃতি ২|১৬১]
১. (আর্তঃ অপি) স্বয়ং দুঃখী হয়েও ,
২. (অংরুতুদঃ) অপরকে পীড়া প্রদান করবে না ।
৩. (ন পরদ্রোহকর্মধীঃ) না অপরের প্রতি ঈর্ষা-দ্বেষ অথবা ক্ষতিসাধনের চিন্তা মনের মধ্যে আনবে ।
৪. (অস্য যয়া বাচা উদ্বিজতে) যেই বচনের দ্বারা অপর কেউ উদ্বিগ্ন হয় ,
৫. (তাম্ অলোক্যাং ন উদীরয়েত্) সেরূপ অপ্রশংসনীয় বাণী এই সংসারে বলবে না ।

❝ যুযোধ্যস্মদ্ দ্বেষাংসি❞ [ঋগ্বেদ-২.৬.৮] হে পরমেশ্বর ! আমাদের হৃদয় থেকে ঈর্ষা , দ্বেষ , বৈরী ভাবকে দূর করো ।
অনেক মানুষ রয়েছেন যারা কিনা না জেনে , বা না বুঝে , যারা আমাদের কষ্ট দেয় তাদের প্রতি আমাদের কি মনোভাব হওয়া উচিৎ


মা নো॑ ব॒ধায়॑ হ॒ত্নবে॑ জিহীল়া॒নস্য॑ রীরধঃ ।
মা হৃ॑ণা॒নস্য॑ ম॒ন্যবে॑ ॥
ঋগ্বেদ ১।২৫।২
অর্থাৎ , হে জগদীশ্বর ! যেসব মানব অজ্ঞানতার কারণে আমাদের অনাদর করে তাদের প্রতি হিংসা কিংবা হনন করার জন্য আপনি কখনো আমাদের প্রেরিত করবেন না । একইভাবে অপরাধ করার পরে আমাদের সম্মুখে লজ্জিত মানবের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করতেও প্রবৃত্ত করবেন না ।
বেদ যেমন আমাদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার উপদেশ প্রদান করে ❝মনুর্ভব জনয়া দৈবং জনম্❞ [ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৬] প্রকৃত মানুষ হও এবং অন্যকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোল । আবার বেদ প্রতিপাদিত কর্ম ত্যাগ করে , অবৈদিক কর্মে রত ব্যক্তি ' মনুষ্য ' সংজ্ঞাযোগ্য নয় । [ঋগ্বেদ ১০.২২.৮] সেটার উপদেশ ও দেয় । বেদের জ্ঞান অনুযায়ী যারা মানবতার , দেশের , নৈতিকতার বিরুদ্ধে সবাই শত্রু ও রাজাকে তার দণ্ডের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে । বেদ যেমন আধ্যাত্মিকশাস্ত্র তেমন রাজনীতিরও । আমাদের সমাজে কুচক্রী , নরাধাম পাপিষ্ঠ , অপকর্মকারী তথা মদ্যপ , ব্যাভিচারী ঠগ- লুন্ঠনকারি রাক্ষস-স্বভাববিশিষ্ট অসুর ব্যক্তিগণের অভাব নেই । তাদের দণ্ড বা উপযুক্ত শাস্তির বিধান রয়েছে ।

য়ে রূ॒পাণি॑ প্রতিমু॒ঞ্চমা॑না॒ऽঅসু॑রাঃ॒ সন্তঃ॑ স্ব॒ধয়া॒ চর॑ন্তি ।
প॒রা॒পুরো॑ নি॒পুরো॒ য়ে ভর॑ন্ত্য॒গ্নিষ্টাঁল্লো॒কাৎ প্র ণু॑দাত্য॒স্মাৎ ॥
[যজুর্বেদ ২.৩০ ]

১। নিজের জ্ঞানানুকূল স্বীয় অন্তঃকরণে মথিত ভাবকে লুকিয়ে রেখে অন্যের সামনে বিপরীত ভাব প্রকাশ করে
২। ধর্মকে আচ্ছাদিত করে
৩। পৃথিবীতে যত্র-যত্র যাওয়া-আসা করে
৪। সংসারে নিজের সুখের জন্য অধর্ম করে , নীচ - দুষ্টস্বভাবদের সহায়তা করে ও অন্যায়পূর্বক অপরের দ্রব্য হরণ করে ।
৫। সেই দুষ্টদের পরমেশ্বর এই স্থান থেকে বা আমাদের দৃষ্টি থেকে দূরীভূত করুন ।



উপ প্রাগাদ্দেবো অগ্নী রক্ষোহামীবচাতনঃ ।
[ অথর্ববেদ ১.২৮.১ ]
অর্থাৎ , দুরাচারী , পীড়াদাতাদের জ্ঞানী উপদেশ দিয়ে ও সৈনিক দণ্ড দ্বারা সংশোধন করেন ।

সনাদগ্নে মৃণসি য়াতুধানান্ন ত্বা রক্ষাংসি পৃতনাসু জিগ্যুঃ অনু দহ সহমূরান্কয়াদো মা তে হেত্যা মুক্ষত দৈব্যায়াঃ ॥
সামবেদ- ৮০
সরলার্থঃ হে অগ্রণী পরমাত্মা ! অথবা শত্রুসংহারক রাজা ! তুমি চিরকাল ধরে পীড়াদায়ক ঘাত-প্রতিঘাত , হিংসা , উপদ্রব প্রভৃতি দোষ সমূহকে এবং দুষ্টজনদের বিনষ্ট করে এসেছ । কাম , ক্রোধ , লোভ প্রভৃতি এবং ঠগ , লুণ্ঠনকারী , চোর প্রভৃতি রুক্ষ স্বভাবী তোমাকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংগ্রামে জয় করতে পারে না । তুমি সুখ-নাশক দুর্বিচারী তথা দুষ্টজনদের সমূলে একে একে ভস্ম করে দাও । সেই দুষ্ট স্বভাব ও দুষ্টজন তোমার বিদ্বানগণের হিতকারী দণ্ডশক্তিরূপ বজ্র থেকে এবং শস্ত্রসমূহ থেকে পালাতে পারে না ।
ভাবার্থঃ হে ধর্মপালক , অধর্মবিধ্বংসক, সদ্গুণপ্রসারক জগদীশ্বর বা রাজা ! তোমার প্রশংসক আমি যখনই মানসিক কাম , ক্রোধ , লোভ , মোহ প্রভৃতি এবং বাহ্য ঠগ , লুণ্ঠনকারী , হিংসক , চোর , মদ্যপ , ব্যভিচারী প্রভৃতি দুষ্টজন দ্বারা পীড়িত হই ; তখনই তুমি আমার সহায়ক হয়ে তাদের সমূলে নষ্ট করে আমাকে রক্ষা করো । দুর্জনের যদি হৃদয় পরিবর্তন সম্ভব হয় ; তবে তার দুষ্ট স্বভাব তথা রুক্ষভাব নষ্ট করে তাকে শুদ্ধ অন্তঃকরণযুক্ত করে দাও যাতে সংসারে সৎ লোকের সমৃদ্ধি হয় এবং সর্বত্র সুখ ও সৌহার্দ্যের ধারা প্রবাহিত হয় ।

উত্ত্বা মন্দন্তু সোমাঃ কৃণুষ্ব রাধো অদ্রিবঃ।
অব ব্রহ্মদ্বিষো জহি ॥১॥
সামবেদ- ১৯৪
সরলার্থঃ হে রাজা ! বীররস তোমাকে উৎসাহিত করে। হে বজ্রধারী , বিবিধ শস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত , ধনুর্বেদে পারদর্শী রাজা ! তুমি প্রজাদের জন্য সব প্রকারের ধনধান্যাদি উৎপন্ন করো , প্রদান করো । ঈশ্বরবিরোধী , বেদবিরোধী , বিদ্যাবিরোধী , সত্যবিরোধী , ধর্মবিরোধী , ন্যায়বিরোধী এবং প্রজাবিরোধী চোর , ডাকাত প্রভৃতি তস্করকে দূর করো ।

অপ ত্যং বৃজিনং রিপুং স্তেনমগ্নে দুরাধ্যম্।
দবিষ্ঠমস্য সৎপতে কৃধী সুগম্ ॥৯॥
সামবেদ- ১০৫
সরলার্থঃ হে সজ্জনের পালনকর্তা পরাক্রমশালী পরমাত্মা , বিদ্বান ও রাজা ! আপনি সেই পরিত্যাজ্য পাপপ্রবৃত্তিকে , কামক্রোধাদি ষড়রিপুকে অথবা বাহ্যিক শত্রুকে , চোরকে এবং খারাপ চিন্তনকারী দ্বেষকারীকে দূর থেকে দূরে নিক্ষেপ করে সরিয়ে দিয়ে আমাদের চলার পথ সুগম করুন ।
ভাবার্থঃ পাপচিন্তা বা পাপীরা , কাম-ক্রোধ ইত্যাদি রিপু অথবা বাহ্য শত্রু , চৌর্যবৃত্তি অথবা চোরেরা , কুপ্রবৃত্তি অথবা কুপ্রবৃত্তিধারী মানুষেরা– যারাই আমাদের ওপর আক্রমণ করে , তাদের আমরা পরমাত্মা , বিদ্বানগণের এবং রাজার সহায়তায় দূর করে দেই । সদ্বিচার ও সদ্বিচারশীল ব্যক্তিগণ আমাদের সহায়তাকারী হয়ে বিচরণ করেন ।

সদসস্পতিমদ্ভুতং প্রিয়মিন্দ্রস্য কাম্যম্।
সনিং মেধাময়াসিষম্ ॥৭॥
সামবেদ- ১৭১
সরলার্থঃ অন্য জনগণ অপেক্ষা বিশিষ্ট গুণ , কর্ম ও স্বভাবসম্পন্ন , পরমাত্মার প্রিয় , প্রজাদের পছন্দনীয় , রাষ্ট্রের ধনকে সুষ্ঠু বিভাগকারী , প্রজাদের সৎকর্মের পুরষ্কার প্রদানকারী এবং অসৎকর্মের যথাযোগ্য দণ্ড প্রদানকারী , রাষ্ট্রসভার অধ্যক্ষ রাজার নিকট আমি বিদ্যাপ্রচার এবং ধনের যাচ্ঞা করি ।

বয়মেনমিদা হ্যোপীপেমেহ বজ্রিণম্।
তস্মা উ অদ্য সবনে সুতং ভরা নূনং ভূষত শ্রুতে ॥১০॥
সামবেদ- ২৭২
সরলার্থঃ আমরা সকলেই দুষ্ট শত্রু তথা চোর , ডাকাত , দুষ্কৃতকারী প্রভৃতিদের প্রতি দণ্ডধারী এই নিজের সম্রাটকে বর্তমান কালে এবং অতীতকালে এই রাষ্ট্র যজ্ঞে কর প্রদান দ্বারা বৃদ্ধি করেছি । হে ভ্রাতা ! তোমরাও সেই সম্রাটের জন্য আজ রাষ্ট্ররূপ যজ্ঞে নিজের আমদানির অর্থ থেকে পৃথক করে প্রদেয় রাজকর প্রদান করো । হে অন্য প্রজাজন ! তোমরাও নিশ্চয়তা পূর্বক রাজ আজ্ঞা শোনার পর রাজাকে নিজ নিজ প্রদেয় অংশ প্রদান করে অলঙ্কৃত করো ।
ভাবার্থঃ সবল মানুষের দুর্জন ও দুর্গুণের বিনাশক তথা সজ্জন ও সদ্গুণের পোষক পরমেশ্বরের উপাসনা করা উচিত । সেই ভাবেই দুষ্ট শত্রু , চোর , লম্পট , ডাকাত , ছিনতাইকারী প্রভৃতি তথা অশান্তি বৃদ্ধিকারীদের শাস্তিপ্রদানকারী এবং সজ্জনদের তথা শান্তিপ্রেমীদের রক্ষাকারী সম্রাটকেও কর প্রদান করে সম্মান করা উচিত ।

য়দিন্দ্র শাসো অব্রতং চ্যাবয়া সদসস্পরি।
অস্মাকমংশুং মঘবন্পুরুস্পৃহং বসব্যে অধি বর্হয় ॥৬॥
সামবেদ- ২৯৮
সরলার্থঃ হে পাপ ও পাপীদের বিনাশক রাজা , যেহেতু আপনি শাসক , সেহেতু রাষ্ট্রসেবার নিমিত্ত সত্যাচরণরূপ ব্রত গ্রহণ করে না , এমন ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপরিষদের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে দিন । হে ধন-সম্পদের অধিপতি ! আমাদের অতিশয় প্রিয় প্রদত্ত কর-রূপ অংশ দানকে রাষ্ট্রহিত কার্যে ব্যয় করুন ॥৬॥
ভাবার্থঃ সেই ব্যক্তিই রাষ্ট্রপরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্য , যে রাষ্ট্রসেবার ব্রতে দীক্ষিত । প্রজাদেরকেও বর্ণাশ্রমের মর্যাদা পালনকারী এবং কর্মপরায়ণ হওয়া উচিত । প্রজাদের উচিত স্বেচ্ছায় রাজাকে কর প্রদান করা এবং রাজারও উচিত করের দ্বারা প্রাপ্ত অর্থাদি সম্পদকে রাষ্ট্রহিত কার্যে ব্যয় করা ।
বেদ এমনই কিছু দণ্ড বিধান প্রদান করেছেন যার দ্বারা বিশ্ব শত্রু-মুক্ত এবং মানুষ পরস্পর মিত্রতা ভাব দ্বারা সুন্দর বিশ্ব গঠন করতে পারে ।

১) আমাদের মধ্যে যেন দুৃঃখপ্রদানকারী পাপী বা চোর ডাকাত উৎপন্ন না হয় । [ যজুর্বেদ ১।১ ]
২) দুষ্ট গুণ , দুষ্ট স্বভাব , বিদ্যার বিরোধী ছলযুক্ত , দান বা বিদ্যারহিত দুষ্ট প্রাণীদিগকে নির্মূল করণ এবং সন্তাপ প্রদান [ যজুর্বেদ১।৭ ]
৩) পরমেশ্বর দোষনাশক , বিদ্বেষী , ছল-কপটযুক্ত , পাপী , কাম-ক্রোধাদিযুক্ত যারা ধর্মাত্মা ও ধর্মাত্মাদের সুখকামনাকারী আমাদের দুঃখ দেয় তাদেরকে শিক্ষা ও তাড়না প্রদানের জন্য পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা । [ যজুর্বেদ ১।৮ ]
৪) দু'ষ্টস্বভাবযুক্তদের ঘর থেকে পৃথকীকরণ এবং ধর্মরহিত শত্রুদের দূরীকরণ । [ যজুর্বেদ১।১৩ ]
৫) চোর বা শত্রুদের বিনাশ , পবিত্রতা আদি গুণ রহিত, দুষ্ট স্বভাবযুক্ত তথা শুদ্ধি ত্যাগী , দান আদি ধর্ম রহিত তথা ডাকাতদের নাশের সদা প্রযত্ন করা উচিত । [ যজুর্বেদ ১।১৬ ]
৬) দুঃখ এবং দু'ষ্টস্বভাবযুক্ত মনুষ্যদের বিনাশ , সৎসঙ্গরূপ যজ্ঞ । [ যজুর্বেদ ১।১৯ ]
৭) সকলের উপকারী ধার্মিক সজ্জনদের বিরোধকারী অধর্মাত্মাদের বন্ধনপূর্বক শাস্তি প্রদান [ যজু০ ১।২৫ ]
৮) উক্ত শত্রুদের বন্ধনের কারণ এবং সেই বন্ধনের স্বরুপ । যেমন: পাপীদের বন্ধনপূর্বক তাদের হৃদয়ে শুভ গুণ বা বিচার উৎপন্ন করার জন্য পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা [ যজু০ ১।২৬ ]
৯) শত্রুদের নাশকরণ মানে তাদের দোষসমূহের নাশ করা , পরসুখ সহ্য করতে পারে না এবং অপরকে দুৃঃখপ্রদান করে এমন শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম । [ যজু০ ১।২৯ ]
১০) সাক্ষাম তান্বাহুভিঃ শাশদানান্ [ অথর্ববেদ ২০.৮৭.৪ ] আমরা সেই হিংসক শত্রুদের নিজের বাহুবল দ্বারা জয় করি ।
একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে , বেদে নিরীহ মানুষকে কোনভাবেই আঘাত বা তাদের ক্ষতি সাধনের কোনরুপ বর্ণনা নেই বরং যারা কিনা অবৈধিক কর্মাদিতে রত , সমাজের ক্ষতিকারক তাদের রাজদণ্ড দ্বারা তাদের সমূলে উৎপাঠিত করা কোন মানবতা বিরুদ্ধ নয় বরং মানবতার পরিপন্থী ।


বা॒হূ মে॒ বল॑মিন্দ্রি॒য়ꣳ হস্তৌ॑ মে॒ কর্ম॑ বী॒র্য়᳖ম্ ।
আ॒ত্মা ক্ষ॒ত্রমুরো॒ মম॑ ॥
[ যজুর্বেদ ২০.৭ ]
ভাবার্থঃ হে মানবগণ ! আমার বল , ধন , বাহুদ্বয় , পরাক্রম, হৃদয় রয়েছে । আমি নিজে অনাদি জীবাত্মা ও সব রকমের ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম ।

মরুতো যদ্ধ বো বলং জনাঁ অচুচ্যবীতন ।
গিরীঁরচুচ্যবীতন ॥
[ঋগ্বেদ ১.৩৭.১২]
অনুবাদঃ হে বীর মানবগণ ! তোমার মধ্যে যে বল আছে তাতে তুমি পাহাড়ের মতো দৃঢ় শত্রুকেও টলাতে পারো ।

অ॒ক॒র্মা দস্যু॑র॒ভি নো॑ অম॒ন্তুর॒ন্যব্র॑তো॒ অমা॑নুষঃ । ত্বং তস্যা॑মিত্রহ॒ন্বধ॑র্দা॒সস্য॑ দম্ভয় ॥
[ঋগ্বেদ ১০.২২.৮]
অনুবাদঃ হে মানব ! তুমি অন্যদের কষ্ট দেয়, সৎকর্ম করে না , দমন-নিপীড়ন করে এমন অমানুষদের নাশ করো ।

উদ্বৃ॑হ॒ রক্ষঃ॑ স॒হমূ॑লমিন্দ্র বৃ॒শ্চা মধ্যং॒ প্রত্যগ্রং॑ শৃণীহি। আ কীব॑তঃ সল॒লূকং॑ চকর্থ ব্রহ্ম॒দ্বিষে॒ তপু॑ষিং হে॒তিম॑স্য ॥
[ঋগ্বেদ ৩.৩০.১৭]
অনুবাদঃ হে বীর ! প্রাণঘাতী দুষ্টকে এক এক করে সমূলে বিনাশ করো , যত দূরেই থাকুক না কেন পাপী , দস্যুরা যেন রক্ষা না পায় , তাদের প্রতি জ্বালাময়ী অস্ত্র চালাও ।

অতি॑ ধাবতাতিসরা॒ ইন্দ্র॑স্য॒ বচ॑সা হত। অবিং॒ বৃক॑ ইব মথ্নীত॒ স বো॒ জীব॒ন্মা মো॑চি প্রা॒ণম॒স্যাপি॑ নহ্যত ॥
[অথর্ববেদ ৫.৮.৪]
অনুবাদঃ হে বীরগণ ! শত্রুদের পরাভূত করো, তোমার হাত থেকে যেন তারা কোনভাবে ছাড়া না পায়, তাদের প্রতিহত করো ।

পরি॑বৃতো॒ব্রহ্ম॑ণা॒ বর্ম॑ণা॒হং ক॑শ্যপস্য॒ জ্যোতি॑ষা॒ বর্চ॑সা চ। মা মা॒প্রাপ॒ন্নিষ॑বো॒ দৈব্যা॒ যা মা মানু॑ষী॒রব॑সৃষ্টাঃ ব॒ধায়॑॥
[অথর্ববেদ ১৭.১.২৮]
অনুবাদঃ আমি বেদ দ্বারা সুরক্ষিত , সূর্যের মতো তেজ ও কান্তিময় হবো । কোন প্রাকৃতিক বা মানবীয় আঘাত যেন আমার ক্ষতি করতে না পারে ।

যদ্বদা॑মি॒ মধু॑ম॒ত্তদ্ব॑দামি॒ যদীক্ষে॒ তদ্ব॑নন্তি মা। ত্বিষী॑মানস্মি জূতি॒মানবা॒ন্যান্হ॑ন্মি॒ দোধ॑তঃ ॥
[অথর্ববেদ ১২.১.৫৮]
অনুবাদঃ যখন আমি কথা বলি আমি মধুরভাবে বলি, যখন আমি দেখি মানুষও আমাকে প্রেমভাবে দেখে । আমি তেজস্বী , পরাক্রমী । আবার আমিই আমার প্রতি বিদ্বেষকারী শত্রুদের ধূলিস্যাৎ করি ।
প্রতিদিনকার মানব জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন কিনা আমরা নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও অন্য ব্যক্তির দ্বারা নানা রকম আক্রমণ কিংবা অপরাধের শিকার হই ।


উদগাদয়মাদিত্যো বিশ্বেন সহসা সহ ।
দ্বিষন্তং মহ্যং রন্ধয়ন্মো অহং দ্বিষতে রধম্ ॥
ঋগ্বেদ ১।৫০।১৩
অনুবাদঃ হে বিদ্বান ! যেভাবে এই অবিনাশী সূর্য উদিত হয় সেভাবে তুমি সম্পূর্ণ বল দ্বারা উত্থিত হও । যেভাবে তুমি ধার্মিক মানবের বিদ্বেষকারী শত্রুকে বিনাশ করো সেভাবেই আমিও শত্রুদের প্রতি আচরণ করবো । যে শত্রু আমাকে মারে তাকে আমিও মারবো , যে আমাকে মারবে না তাকে আমিও মারবো না ।

ধুনেতয়ঃ সুপ্রকেতং মদন্তো বৃহস্পতে অভি যে নস্ততস্রে।
পৃষন্তং সৃপ্রমদব্ধমূর্বং বৃহস্পতে রক্ষতাদস্য যোনিম্ ॥
ঋগ্বেদ ৪।৫০।২
অনুবাদঃ হে বৃহৎ পালক মানব ! যে হিংসক - আনন্দপ্রদাতা ধর্মাত্মাদের কম্পিতকারীদেরও কম্পিতকারী , প্রকৃষ্ট প্রজ্ঞাযুক্ত বিদ্যাদি উত্তম গুণের সিঞ্চনকারী , উত্তমগুণযুক্ত, অহিংসিত মানবদের বিনাশ করে এবং আমাদের চতুর্দিকে নাশ করে তার নিবারণ করুন । হে বৃহৎপালক ! যাকে রুদ্ধ করার মাধ্যমে বিদ্যা - আচরণের আপনি রক্ষা করেন ।

উত হন্তি পূর্বাসিনং প্রত্যাদায়াপর ইষ্বা।
উত পূর্বস্য নিঘ্নতো নি হন্ত্যপরঃ প্রতি ॥
অথর্ববেদ ১০।১।২৭
অনুবাদঃ অতি শ্রেষ্ঠ মানবই প্রথমে আঘাতকারীকে বাণ দ্বারা প্রত্যাঘাত করে । অতি শ্রেষ্ঠ মানবই প্রথমে আঘাতকারীকে নিরন্তর হনন করে ।
দেখুন বেদে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে প্রথমে আক্রমণ করবে তাকেই প্রতিহত করার জন্য । এছাড়াও এই মন্ত্রগুলোতে এটাও প্রার্থনা করা হয়েছে যারা আমাদেরকে আক্রমণ করে না এবং নিরীহ নিরপরাধ মানুষ তাদেরকে যেন আমরা ক্ষতি না করি । আরো লক্ষ করা যায় যে এই মন্ত্র গুলোতে মানুষকে বলা হয়েছে তারা যেন ধর্মের পালন এবং তার আচরণ করে অর্থাৎ এই মন্ত্রগুলো দ্বারা সুস্পষ্ট যে বেদে নিরীহ মানুষের সাথে বা হিংসাত্মক মনোভাবের কোনরকম কোন বর্ণনা নেই বরং যদি কেউ আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে কিংবা প্রথমে আঘাত করে কিংবা প্রতিহিংসা পরায়ণ হয় প্রত্যাঘাতের ব্যবস্থা নেব ।

আত্মরক্ষার্থে আততায়ীকে বধ করবে ; এ বিষয়ে কিছুমাত্র পাপ নেই এমন বলা হয় । আততায়ী ৬ ধরনের । এ বিষয়েও বলা হয়েছে - অগ্নিদ [ যে ঘরে আগুন দেয় ] , বিষদাতা, উদ্যতাস্ত্র [ হত্যার জন্য অস্ত্রধারণ করে ] , ধনাপহারী [ ধন অপহরণ করে ] , ক্ষেত্রাপহারী [ জমি দখল করে ] ও দারাপহারী [ স্ত্রী হরণ করে ] এই ৬ প্রকার আততায়ী । বেদান্তপারগ ব্যক্তিও যদি আততায়ী হয়ে আসে , তা হলে সেই হননেচ্ছু ব্যক্তিকে বধ করবে , তা ব্রহ্মঘাতী হবে না । স্বাধ্যায়সম্পন্ন সৎকুলজাত ব্যক্তিও আততায়ী হলে তাকে বধ করবে , তাতে ঘাতক ব্রহ্মহত্যাপাপে লিপ্ত হবে না ; কেননা , আক্রান্তের ক্রোধ আততায়ীর ক্রোধকে পরাস্ত করে ।


নমো রুদ্রায়াততায়িনে
যজুর্বেদ ১৮।১৮
অনুবাদঃ শত্রুদের কাঁদায় এবং উত্তমভাবে বিস্তৃত শত্রুদের পরাজিতকারী মানবকে অন্ন প্রদান করবে এবং তাদের প্রতি আমাদের নমস্কার ।

প্রবৃদ্ধো দস্যুহাভবৎ ।
ঋগ্বেদ ৮।৭৭।৩
অনুবাদঃ রাজা আততায়ী দস্যুদের দণ্ড প্রদান করবেন ।

সচা যদাসু জহতীষ্বৎকমমানুষীষু মানুষো নিষেবে ।
ঋগ্বেদ ১০।৯৫।৮
অনুবাদঃ আমরা একত্রে রাজশক্তির মাধ্যমে আততায়ীদের হাত থেকে প্রজাদের রক্ষা করবো ।

স্বয়ং সা রিষয়ধ্যৈ যা ন উপেষে অত্রৈঃ।
ঋগ্বেদ ১।১২৯।৮
অনুবাদঃ আততায়ী শত্রুদের আমরা সর্বতোভাবে বিনষ্ট করি ।
