কোনও জীবকে হত্যা করা পাপ, কিন্তু মশা- মাছি-কীট ইত্যাদির হত্যা করায় কোন পাপ হয় না।
মশা-মাছিকে গৃহে প্রবেশ থেকে বাধা প্রদান করা যেতে পারে, এতে কোন পাপ নেই। কিন্তু যে মশা-মাছি-জীব-জন্তু-কীট ক্ষতি করে সেগুলিকে শেষ করা অথবা মারা উচিত, কারণ মনুষ্য-যোনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এদের রক্ষা করা মানুষের পরমকর্তব্য। যার দ্বারা মানবের নিজের জীবনে বিপদ হতে পারে, তাকে হত্যা করায় কোন আপত্তি নেই। মানব যদি মানব জাতির জন্য ঘাতক হয় তবে তার হত্যা করায় পাপ হয় না।
মহাভারত যুদ্ধ এর প্রমাণ এবং ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণও অর্জুনকে বোঝাতে গিয়ে (সংসারকে বলেছেন) বলেছেন যে, যে অধর্মী তার দেহ নষ্ট করাই ধর্ম, কারণ শরীর দ্বারা ধর্মাধর্মের কার্য হয় আত্মা কখনও মরে না। কৌরবদের হত্যায় শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের সঙ্গ এইজন্যই দিয়েছিলেন যে, কৌরবরা অধর্মের কার্যই করত কেবল। তাদের থামানোর জন্যই পাণ্ডবদের ছাড় দেওয়া হয়েছিল যে, যুদ্ধের মাধ্যমে কৌরবদের সমাপ্ত করতে হবে। অসুরদের হত্যা করায় কোন পাপ নেই – এ তো পুণ্যকর্ম। শত্রুর হত্যাতেই পুণ্য, নতুবা শত্রুর হাতে নিজের প্রাণ হারানো কোথাকার বুদ্ধিমানী ?
এমনই জীব-জন্তু-কীট ইত্যাদিও (সাপ-বিছে-সিংহ ইত্যাদি বন্যপ্রাণী) ঈশ্বরের দ্বারা নির্মিত আর এদের হত্যা করার আমাদের কোন অধিকার নেই, কিন্তু যখন এই জীবগুলি মানুষের ক্ষতি করে তখন এদের হত্যা করতেই হয়, একে আপাতধর্মও বলে অর্থাৎ এ ধর্ম বিরুদ্ধ তো ঠিকই, কিন্তু এছাড়া আর কোনো
উপায় নেই।
ঘরে তোতাপাখি আসলে আমরা তাকে বড়ই প্রীতির সঙ্গে দেখি। তাকে স্পর্শ করার চেষ্টাও করি। তাকে হত্যার সামান্য বিচার আমাদের আসে না, কারণ তার দ্বারা আমাদের কোনো ক্ষতি হয় না। চড়ুই-পায়রা ইত্যাদি পক্ষী ঘরে আসে। তাদেরকে আমরা হত্যা করি না, তাড়িয়ে দিই যাতে তারা ঘরের মধ্যে এখানে- ওখানে কোন ক্ষতি না করে, এদের হত্যা করার ভাবনা কখনো উৎপন্ন হয় না। অতএব যার দ্বারা মনুষ্য-জাতির কোন ক্ষতি হয় না, সেই সমস্ত জীবকে হত্যা করা পাপ, যেমন – কুকুর, ঘোড়া, ছাগল, গরু, মহিষ ইত্যাদি। সিংহ জঙ্গলে থাকে কিন্তু যদি সে শহরের দিকে অগ্রসর হয় আর নরসংহার শুরু করে দেয় তবে তার হত্যাতেই কল্যাণ। প্রমাণ যজুর্বেদ ১৩.৪৭-৫২ ।
যে জীব আমাদের (মানব জাতিকে) বিরক্ত করে না, আমাদেরও তাদেরকে আঘাত করা উচিত নয়, বরং তাদের প্রতি স্নেহ রাখা দরকার - তাদের কখনও হত্যা করা উচিত নয়। পশু-পক্ষী আমাদেরই তো সেবা করে। কীট-পতঙ্গ ভক্ষণ করে, নোংরা পরিষ্কার করে। মাছেরা জলে বাস করে জল পরিষ্কার করে, অতএব কোনও জলের প্রাণীকে হত্যা করা উচিত নয়।
গরু সমস্ত পশুর প্রতিনিধি, অতএব গরু হত্যা করা ভয়ংকর পাপ। বেদে বলা হয়েছে (ঈশ্বরের আদেশ) যে, 'গোহত্যা কখনোই করবে না', এর এ অর্থ নয় যে, অন্যান্য পশুদের হত্যা করো। গাভীর মধ্যে সমস্ত অহিংসক পশুর গণনা করো, কারণ গোরু সমস্ত পোষ্যদের প্রতিনিধি।
তাই যতটা সম্ভব মশা-মাছি ইত্যাদি প্রাণীর হত্যা না করে, ঘরে এদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করুন। ব্যর্থ হত্যা ত্যাগ করে এগুলির থেকে রক্ষা পাবার উপায় করা উচিত।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর।