✅ সোমনাথ মন্দিরে কি আসলেই কোন মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিলো❓
▪️ 'শেষ জামানার ফিতনা' বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় মিথ্যা সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের জবাব
বইটিতে সুলতান গজনবী কর্তৃক সোমনাথ মন্দির ভাঙার ইতিহাস ও কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে,
“ ভগবানের সন্তুষ্টি লাভের জন্য তারা কুমারী মেয়েকে দেবতার সামনে ধর্ষণ করে বলি দিত। তখনকার উগ্র হিন্দুবাদী সোমনাথের পুরোহিতরা একটি মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে বলি দেওয়ার চেষ্টা করলে সেই মেয়েটি আপন সতিত্ব রক্ষার জন্য মন্দিরের কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। গজনবি তখন গজনিতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইমানি জোশে অস্থির হয়ে ওঠেন। মুসলিম বোনের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তাঁর রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। এই অন্যায়ের প্রতিবিধানের জন্যই ষড়যন্ত্রের আখড়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার শপথ নেন।
দাদারা, তোমরা তোমাদের ধর্মীয় প্রার্থনা করো; তাতে তো কোনো সমস্যা ছিল না। তোমাদের মেয়েদের তোমরা ইচ্ছামতো ধর্ষণ করে মন্দিরে বলি দিলে গজনবির তাতে আপত্তি ছিল না; কিন্তু প্রার্থনার নামে কেন মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করতে গেল তোমাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ হিংস্র পূর্বসূরিরা? দোষটা কার-তোমাদের নাকি তাঁর? একজন মুসলিম বোনকে ধর্ষণ করে হত্যা করবে আর তাঁর মতো আত্মপ্রত্যয়ী আত্মমর্যাদার অধিকারী সুলতান বসে বসে আঙুল চুষবেন, এটা তোমরা ভাবো কীভাবে? তোমরা কি বর্তমান মুসলিম উম্মাহের ওপর গজনবিকে বিচার করো? তিনি তো ছিলেন এমন এক আত্মমর্যাদাবান সুলতান, এহেন অন্যায়ের প্রতিবিধানের জন্য তাঁর সালতানাত বিসর্জন দিতে হলেও তিনি কুণ্ঠিত হতেন না।”
🔴সমীক্ষা:
উক্ত ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা । আমরা সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছি উক্ত কাহিনীর সপক্ষে যদি তাদের ক্ষমতা থাকে তবে কোন ঐতিহাসিক দস্তাবেজ বা প্রমাণ উপস্থাপন করুক । তাদের সম্পূর্ণ আয়ুস্কাল অব্দি সময় দিলাম আমরা । আরো বিবেচ্য -
১. বইটির লেখকরা সুপরিচিত বক্তা । এমন একটি বক্তব্য তারা কীভাবে নির্দ্বিধায় প্রমাণ ছাড়াই লিখে ফেললেন ?
২. বইটিতে 'দাদা' বলে হিন্দু নির্দেশ করে কটাক্ষ করে অপমন্তব্য ও মিথ্যাচার করা কী ধরনের নৈতিক শিক্ষা ?
৩. তথ্যসূত্র উল্লেখ তো তারা করেনইনি, উলটো ছত্রেছত্রে যে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে তারা কটূক্তি করেছেন এটাই কি ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা আপনাদের পক্ষ থেকে ?
পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরাও কম যায়নি, এমনই এক লেখিকা গার্গী চক্রবর্তী বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসকে নৈতিক সমর্থন দিতে একটি কাহিনী লেখেন, যাতে বলেন কচ্ছের মহারাণী নাকি মন্দিরে ধর্ষিত হন, সমস্ত রাজারা মন্দির অপবিত্র হওয়া দেখে আওরঙ্গজেবকে অনুরোধ করেন ব্যবস্থা নিতে । ঔরঙ্গজেব আদেশ দিলেন, পবিত্র দেবাঙ্গন যেহেতু কলুষিত হয়েছে, অতএব প্রভু বিশ্বনাথকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হোক। মন্দির ভূমিস্যাৎ করা হোক। আর মহান্তকে বন্দী করে শাস্তি দেওয়া হোক।
গার্গী চক্রবর্তী তথ্যসূত্র হিসেবে যার নাম লিখেছেন সেই বিশ্বম্ভরনাথ পাণ্ডে তাঁর গল্পের তথ্যসূত্র হিসাবে লিখেছেন, ড. পট্টভি সীতারামাইয়া প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The Feathers and the Stones এ এই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
বলা বাহুল্য এমনতর ঘটনার কোনও প্রামাণ্য দলিল নেই। পট্টভি সীতারামাইয়া কংগ্রেসী রাজনীতিবিদ এবং স্বভাবতই মিথ্যুক। তাঁর বইয়ের নাম, Feathers and Stones. বিশ্বম্ভরনাথ পাণ্ডে তাঁর বই লেখার সময় হাতের কাছে সীতারামাইয়ার বই ছিল না। ফলে বইটার ভুল নাম দিয়েছেন। সীতারামাইয়ার তথাকথিত প্রামাণ্য দলিলটা হচ্ছে, "This story of Beneras Musjid was given in a rare manuscript in Lucknow which was in the possession of a respected Mulla who had read it in the Ms. and who though he promised to look it up and gave the Ms. to a friend, to whom he had narrated the story, died without fulfilling his promise."।
বোঝাই যাচ্ছে, সীতারামাইয়া কোনও প্রাচীন পুঁথি দেখেন নি; তিনি শুধুমাত্র অন্যের মুখের কথা বিশ্বাস করে স্মৃতিকথাতে ঔরঙ্গজেবকে বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করার দায় থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কারণ, সনাতন বিরোধীদের তৈল প্রদান করাটাই এদের জিনগত ব্যাধি। আর মিথ্যার নর্দমায় মুখ রেখে চলা কমিউনিষ্ট গার্গী চক্রবর্তী মিথ্যুক বিশ্বম্ভরনাথ পাণ্ডের ছাপা লেখাকে সত্য বলে ধরে নিয়ে পাঠকের কাছে পরিবেশন করেছেন।
আওরঙ্গজেবের ইতিহাস চর্চা করে খুঁজে দেখেননি, আওরঙ্গজেব জীবনে কোনও দিন বাংলার দিকে এসেছিলেন কি না। আর সীতারামাইয়া কচ্ছের রাণীকে ধর্ষণের কথা লেখেন নি; তাঁর গহনা কেড়ে নেওয়ার কথাই শুধু লিখেছেন। আর আমাদের এই বাংলার আর এক বামী জোচ্চোর স্রেফ পাণ্ডের বই থেকে টুকলী করে দাঙ্গার একটা ইতিহাস বইয়ে কচ্ছের রাণীর ধর্ষণের গল্প ছেড়েছেন। কতবড় তঞ্চক এই পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত তা চিন্তা করুন।
অতএব ইতিহাস সম্পর্কে জানুন, অন্যকে জানান । আপনি সচেতন না হলেও অপপ্রচার থেমে নেই । এ ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষা নেয় না তার ব্যক্তিত্ব নেই, ভবিষ্যতও নেই । নতুবা অনুতাপ যখন হবে তখন আর কিছুই করার থাকবে না ।
📍 শিক্ষা ও শাস্ত্রার্থ বিভাগ
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর