বৈদিক শাস্ত্রে মৃতদেহ দাহের উল্লেখ আছে নাকি সমাধির ?
সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি হলো বেদ - বেদোঽখিলো ধর্মমূলম্ [মনুস্মৃতি ২।৬]৷ শাস্ত্রে বারংবার বলা হয়েছে বেদানুকূল সিদ্ধান্তই ধর্ম ও তদ্বিরীত অধর্ম - “ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ”[মনুস্মৃতি ২।১৩] অর্থাৎ যে ধর্মের বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চায় তার জন্য বেদই মূখ্য প্রমাণ। বেদ স্বয়ং সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর দ্বারা প্রদত্ত, ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্ [গীতা ৩।১৫] = বেদ স্বয়ং ঈশ্বর হতে প্রকাশিত। এখানে আস্তিক সনাতন ধর্মালম্বী মাত্রে বেদের বিধান মানতে বাধ্য কারণ “নিজশক্ত্যভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রামাণ্যম্।” [সাংখ্য দর্শন ৫।৫১] = ঈশ্বরের স্বাভাবিক শক্তি বেদরূপে প্রকাশিত বলে বেদ স্বতঃপ্রমাণ। ব্রহ্মসূত্রে “শাস্ত্রয়োনিত্বাৎ” [ব্রহ্মসূত্র ১।১।৩] তে তথা “অতএব চ নিত্যত্বম্”[ব্রহ্মসূত্র ১।৩।২৯] ইত্যাদি সূত্রের দ্বারা পরমেশ্বরকে ঋগ্বেদাদি রূপ সর্ব জ্ঞানের কর্তা মেনে বেদের নিত্যতা প্রতিপাদন করা হয়েছে। যদি আপনি শাস্ত্রীয় কর্মে কোন প্রকার অনুশাসন কিংবা বিধানের পরামর্শ দিতে চান আপনাকে শাস্ত্রমর্যাদার ক্রমানুসারে চলতে হবে - আপনি বাধ্য এই ক্রম চলতে, এটাই দর্শন থেকে গীতা সর্বশাস্ত্রের সর্বতন্ত্র সর্বপ্রামাণ্য সিদ্ধান্ত ।
মৃতদেহ দাহই শ্রুতিসম্মত । যজুর্বেদের ৪০তম অধ্যায়ের ১৫শ মন্ত্রে বলা হয়েছে -
বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তꣳ শরীরম্।
ও৩ম্ ক্রতো স্মর ক্লিবে স্মর কৃতꣳ স্মর॥
যজুর্বেদ ৪০।১৫
সরলার্থঃ হে কর্মশীল জীব! তুমি শরীর ত্যাগ করার সময় ‘ও৩ম্’ – এই নামবাচ্য ঈশ্বরকে স্মরণ করো, নিজের সামর্থ্য প্রাপ্তির জন্য পরমাত্মা ও নিজের স্বরূপকে স্মরণ করো, নিজের কৃতকর্মকে স্মরণ করো। এখানে (এই শরীরে) বিদ্যমান ধনঞ্জয়াদিরূপ বায়ু কারণরূপ বায়ুকে, আর কারণরূপ বায়ু অবিনাশী কারণকে (প্রকৃতিকে) ধারণ করে। অতঃপর এই নশ্বর শরীর অন্তে ভস্মে পরিণত হয়— এরূপ জানবে।
ভাবার্থ হলো, মনুষ্যগণের উচিত যে, যেমন মৃত্যুর সময়ে চিত্তের বৃত্তি হয়ে থাকে এবং শরীর থেকে আত্মার পৃথক ভাব হয়, ওইরূপ চিত্ত-বৃত্তি এবং শরীর ও আত্মার সম্বন্ধকে জীবনকালেও জানবে। মৃত্যুর পর এই শরীরের ভস্মান্ত-ক্রিয়া করবে। এই দাহক্রিয়ার পরে মৃতের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো সংস্কার পালন করা নিষ্প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে (জীবনকালে) এক পরমেশ্বরেরই আজ্ঞা পালন, উপাসনা এবং স্বীয় সামর্থ্যের বৃদ্ধি করবে। কৃতকর্ম কখনো নিষ্ফল হয় না, এরূপ জেনে ধর্মে রুচি এবং অধর্মে অপ্রীতি করতে থাকবে।
“ভস্মান্তꣳ শরীরম্” (যজু০ ৪০।১৫)॥ এই শরীরের সংস্কার (ভস্মান্তম্) অর্থাৎ ভস্ম করা পর্যন্ত (সংস্কারবিধি, অন্ত্যেষ্টিকর্ম)।
মৃত্যুর সময় কী করা উচিত— কর্মশীল জীব দেহান্ত অর্থাৎ শরীর ত্যাগের সময়, ‘ও৩ম্’ – পরমেশ্বরের এই মুখ্য নামের স্মরণ করবে। স্বীয় সামর্থ্য প্রাপ্তির জন্য পরমাত্মা এবং নিজের স্বরূপকে স্মরণ করবে। যা কিছু জীবনে করেছে, সেই সব কৃতকর্মকে স্মরণ করবে। এই শরীরের মধ্যে স্থিত ধনঞ্জয়াদি বায়ু, কারণরূপ সূক্ষ্ম বায়ুর ওপর আশ্রিত এবং কারণরূপ সূক্ষ্ম বায়ু, অবিনাশী কারণের (প্রকৃতির) ওপর আশ্রিত। শরীর থেকে আত্মার পৃথক ভাব উক্ত বায়ুর ওপর আশ্রিত। শরীর থেকে আত্মার পৃথক ভাব অর্থাৎ মৃত্যুর সময়ে যেরূপ চিত্তবৃত্তির কথা বলা হয়েছে, ওইরূপ চিত্তবৃত্তি মানুষকে জীবনকালেও রাখতে হবে। দেহান্তের (মৃত্যুর) পরে এই শরীরের ভস্মান্ত-ক্রিয়া (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া) করবে। ভস্মান্ত-ক্রিয়ার পরে মৃত ব্যক্তির জন্য আর কোনো সংস্কার, কর্তব্য অবশিষ্ট থাকে না। মানুষ জীবনকালে এক পরমেশ্বরেরই আজ্ঞা পালন, তাঁর উপাসনা এবং নিজের সামর্থ্যকে বৃদ্ধি করবে। কৃতকর্ম কখনো বিফল হয় না, এরূপ জেনে ধর্ম মধ্যে রুচি এবং অধর্মে অপ্রীতি রাখবে॥।
এই শ্রুতিতে দুটি কথা বলা হয়েছে— (ক) ভস্মে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে এই শরীরের অন্ত হয় এবং (খ) মৃত্যুর সময় ঈশ্বরের মুখ্য নাম ‘ও৩ম্’ এবং নিজের কৃতকর্মকে স্মরণ করবে। এখন বিচার করা যাক 'ভস্মে পরিণত করার মাধ্যমে শরীরের অন্ত করা উচিত'—
আত্মা অবিনশ্বর, শরীর নশ্বর। আত্মা নিত্য, শরীর অনিত্য। এই নশ্বর শরীরের প্রতি মোহ করা উচিত নয়, কারণ এটি একদিন নষ্ট হয়ে যাবে। এই শরীরে স্থিত নাগ, কৃকল, কূর্ম, দেবদত্ত ও ধনঞ্জয়াদি বায়ু তাদের কারণরূপ সূক্ষ্ম বায়ুকে আশ্রয় করে এবং এই কারণরূপ সূক্ষ্ম বায়ু যখন মূল-প্রকৃতির আশ্রয় গ্রহণ করে, তখনই এই শরীর অসার হয়ে পড়ে। তখন এই শরীরের কোনো মূল্যই থাকে না। তখন শরীরকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হোক কিংবা ছিন্ন-ভিন্ন করা হোক, কোনো কিছুতেই এই শরীরের যায় আসে না। কিন্তু সেই শরীরের সাথে কীরূপ ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়ে উপনিষদের নির্দেশনা আছে। সেজন্য উপনিষদ্ বলছে— মৃত ব্যক্তির দাহকর্মের মাধ্যমে তার শেষ ক্রিয়া (অন্তিম সংস্কার) সম্পন্ন করবে। যদি মৃতদেহকে নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় অথবা কোনো স্থানে ফেলে রাখা হয়, তা রোগ-জীবাণু সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, মৃতদেহকে বিধিপূর্বক অগ্নিতে ভস্মীভূত করে পঞ্চভূতে বিলীন করা উচিত।
মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে দাহ করলে কেউ অশুদ্ধ হয় না অথবা কারো অশৌচ হয় না। এটি ঋষিসম্মত বৈদিক সিদ্ধান্ত। ন্যায়দর্শন প্রণেতা মহর্ষি গৌতম লিখেছেন- "শরীরদাহে পাতকাভাবাৎ" (৩।১।৪) অর্থাৎ মৃতদেহ দাহ করলে পাতকাদি দোষ লাগে না। বরং এটি পুণ্য কর্ম, বৃহদারণ্যক উপনিষদে (৫।১১।১) আছে-
এতদ্বৈ পরমং তপো য়ং প্রেতমরণ্যং হরন্তি ।
এতদ্বৈ পরমং তপো য়ং প্রেতমপ্নাবভ্যাদধতি ॥
অর্থাৎ মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে যাওয়া এবং দাহ করা পরম তপস্যা। এজন্য এর নাম সৎকার।
সুতরাং মৃতদেহ দাহই একমাত্র ও সর্বমান্য সিদ্ধান্ত ।
কতিপয় ব্যক্তি মনুস্মৃতির শ্লোক প্রদর্শন করেন শিশুদের সমাধি দেওয়ার জন্য । উক্ত শ্লোক শ্রুতি বিরোধী বিধান অপ্রামাণিক। কেননা যেখানে শ্রুতির প্রত্যক্ষ আদেশ বিদ্যমান সেখানে স্মৃতিবাক্যে অনুমানের বা বিকল্পের কোন অবকাশ নেই।
অথর্ববেদের ১৮শ কাণ্ডের কিছু মন্ত্রদ্বারা অনেকেই সমাধি নির্দেশ আছে বলে নির্দেশ করেন৷ যথা -
যে নিখাতা যে পরোপ্তা যে দগ্ধা যে চোদ্ধিতাঃ ।
সর্বাস্তানগ্ন আ বহ পিতৃন্হবিষে অত্তবে॥
অথর্ববেদ ১৮.২.৩৪
এখানে,
নিখাতাঃ = ভূমিতে প্রোথিত, পরোপ্তাঃ = ভাসিয়ে দেওয়া, দগ্ধাঃ = জ্বালানো, উদ্ধিতাঃ = নিক্ষিপ্ত ~ এই চার প্রকার মৃতের সংস্কার আছে বলে অনেকে দাবি করেন। এখন মন্ত্রের শেষভাগে “সর্বাস্তানগ্ন আ বহ পিতৃন্হবিষে অত্তবে” = সবাইকে অগ্নি অন্ন গ্রহণে নিয়ে আসুক - এতে আপত্তি নেই । আসুন বাকিগুলো দেখি। গীতা ২.২৩-২৪ অনুযায়ী,
নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।। ২.২৩
অর্থ: এই (আত্মাকে) অস্ত্রসকল ছেদ করতে পারে না, আগুন একে পোড়াতে পারে না, জল একে ভিজাতে পারে না, বাতাস একে শুকাতে পারে না।
অচ্ছেদ্যোঽয়মদাহ্যোঽয়মক্লেদ্যোঽশোষ্য এব চ।
নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোঽয়ং সনাতনঃ ॥ ২.২৪
অর্থ: এই আত্মা অচ্ছেদ্য, এই আত্মা অদাহ্য, অক্লেদ্য এবং নিঃসন্দেহেই অশোষ্য। এই আত্মা নিত্য, সর্বগত, স্থির, অটল, সনাতন।
শব্দার্থ হলো, অচ্ছেদ্য = কাটা যায় না। অদাহ্য = পুড়িয়ে দেওয়া যায় না। অক্লেদ্য = জলে ভেজানো যায় না। অশোষ্য = শুকানো যায় না।
উক্ত অথর্ববেদীয় মন্ত্রের পৌরাণিক অর্থ জীবাত্মার বেলায় প্রযোজ্য হবে না কেননা জীবাত্মাকে দগ্ধ, প্রোথিত করা যায় না । যজুর্বেদ ৪০.১৫ অনুযায়ী দাহসংস্কারই একমাত্র সংস্কার মৃতদেহের, ৪ প্রকারপদ্ধতির প্রশ্নই আসে না । যদি বলেন এটা জীব তথা দেহকে বলা তাহলে পরের অর্ধেক বৃথা কেননা দেহকে তো আর কেউ ডেকে আনতেও পারবে না ও দেহ আসেও না । যদি বলেন জীবদেহ ও আত্মা উভয়কে বলা তবে তা আর মৃতের শ্রাদ্ধ হলো কীভাবে ? কারণ দেহে আত্মা থাকলে সে তো জীবিতই ।
এখানে নিখাত - ভূগর্ভবিদ্যা পণ্ডিত, উদ্ধিত - ভূপৃষ্ঠ ও আকাশমার্গবিদ্ তথা খনিজ পদার্থ বহির্গতকারী পণ্ডিত, দগ্ধ - অগ্নিবিদ্যার পণ্ডিত পরোপ্ত - জলযান পণ্ডিত এই অর্থই যথাযথ ও বেদের প্রকৃত মাহাত্ম্য প্রকাশ করে । যেভাবে স্নাতক অর্থ স্নান করা ব্যক্তি হলেও মূল লক্ষ্য হলো, গুরুকুল থেকে সমাবর্তনে স্নান করা বিদ্যার্থী এখানেও তেমনই ভাবে গ্রহণ করতে হবে ।
মনুস্মৃতি ৩.১৯৯ অনুযায়ী অগ্নিদগ্ধ ও অনগ্নিদগ্ধ কবি পুত্র এবং বর্হিষদ অগ্নিষ্বাত্ত সৌম্য ব্রাহ্মণদের পিতর । এখানেও এই পিতরদের অর্থ জ্বালানো হতে পারে না । এই শ্লোক প্রক্ষিপ্ত তা প্রমাণ করা যায় । কেননা কোথাও এই অর্থ নেই । মহাভারত বনপর্ব ৫০.৫ “সাগ্নয়োঽনগ্নয়স্তথা” অনগ্নি ও সাগ্নি ব্রাহ্মণের উল্লেখ আছে, এরা কেউ মৃত না । তাই মনুস্মৃতির উক্ত শ্লোক প্রক্ষিপ্ত । বনপর্বের ২৪.১৪-১৫ অনগ্নিকে নিরগ্নি ও সাগ্নিকে সাগ্নিহোত্র বলা হয়েছে । অর্থাৎ গীতা ৪.৩৩ অনুযায়ী যথাক্রমে জ্ঞানযজ্ঞ ও দ্রব্যযজ্ঞের যাজ্ঞিক এরা ।
অন্যদিকে ঋগ্বেদ ১০।১৫।১১-তে অগ্নিষ্বাত্তাঃ পদ দ্বারা এবং ঋগ্বেদ ১০।১৮।১০-১৩ সম্পর্কে সমাধির যে উল্লেখ করা হয় তাও ভ্রান্ত। অগ্নিষ্বাত্তাঃ পদের অর্থ সায়ণ করেন 'অগ্নিনা স্বাদিতা' অর্থাৎ যাদের দাহ করা হয়েছে। একই তথাকথিত প্রামাণিক সায়ণভাষ্যে ১০ম মন্ত্রের ভাষ্য মৃতদেহকে ভূমির উপরে রাখার উল্লেখ আছে, নিচে নয় 'অস্মাভির্ভূমৌ নিধীয়মানস্ত্বম্ উপ সর্প উপগচ্ছ'। মনুস্মৃতির ৪।২৪১ শ্লোকেও দেখা যায় মৃতদেহ ভূমিতলে (প্রচলিত বাংলায় আবার ভূমির তলে মানে নিচে ভাববেন না, এটা স্বাভাবিক ভাষাজ্ঞান, তল মানে পৃষ্ঠ) অর্থাৎ ভূমিপৃষ্ঠে পরিত্যাগের উল্লেখ আছে, পুঁতে ফেলা নয়। শুধু তাই নয়, ১০-১৩ মন্ত্রে মৃতের অস্থিকে ভূমিতে প্রোথিত করার উল্লেখ করেছেন সায়ণ, মৃতদেহকে নয়।
১০ম মন্ত্র - ত্বামস্থিরূপং যজমানং পাতু রক্ষতু
১১শ মন্ত্র - এনম্ অস্থিরূপং যজমানং ত্বম্ অভি
১২শ মন্ত্র - অস্থিকুম্ভমবষ্টভ্যোর্ধ্বং
১৩শ মন্ত্র - অস্থিকুম্ভ ত্বৎপরি
অর্থাৎ একটি মন্ত্রের প্রচলিত ভাষ্যেও মৃতদেহ সমাধির কোন উল্লেখই নেই বরং মৃতদেহ দাহের পর বিদ্যমান অস্থিকে মাটিতে প্রোথিত বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ আছে । একই বিধান আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ৪।৫।৬-৮ সম্মতও বটে। এই কথা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীও বলেছেন সংস্কারবিধির অন্ত্যেষ্টিপ্রকরণে,
“ তারপর মৃত্যুর তৃতীয় দিনে মৃতকের কোন আত্মীয় শ্মশানে গিয়া চিতা হইতে অস্থি উঠাইয়া সেই শ্মশানভূমিতে কোথাও সেগুলি পৃথকভাবে রাখিয়া দিবে। ”
সুতরাং ঋগ্বেদোক্ত উক্ত মন্ত্রসমূহে সমাধির প্রমাণ নেই।
মনুস্মৃতি ৫।৬৮-৭০ অনুযায়ী যার বয়স ২ বছরের কম তাকে দাহ না করে সমাধি দিতে হবে। প্রথমত উক্ত বিধান বেদবিরোধী, তাই অমান্য। দ্বিতীয়ত ৭০ শ্লোকে ৩ বছরের কম বালকের উল্লেখ আছে, যদি ৬৮ শ্লোকে ২ বছরের কম উল্লেখ করাই হয় তবে আবার নতুন করে ৩ বছরের কমের উল্লেখ কেন? কোনটি তাহলে স্বীকার্য? পাশাপাশি, ৬৯ শ্লোকে ত্রিরাত্র অশৌচের উল্লেখ আছে, অথচ অন্য সর্বত্র [যেমন মনু০ ৫।৮৩] চারবর্ণের জন্য পৃথক অশৌচের নির্দেশ বিদ্যমান, যা পরস্পর স্পষ্ট বিরোধী। পাশাপাশি ৭০ শ্লোকে যদি দাঁত না হয় বা নামকরণ হয় তবে উদকক্রিয়া করা যেতে পারে বলা হয়েছে। নামকরণ পারস্কর গৃহ্যসূত্র ১.১৭.১ অনুযায়ী জন্মের পর ১১শ দিনে করণীয়। তাহলে তো ২ হোক বা ৩ সবারই উদকক্রিয়া করা সম্ভব, দাহেরও বিধি হয়ে গেলো। এমতাবস্থায় উক্ত শ্লোকত্রয় সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য ও বেদবিরোধী বিধায় প্রক্ষিপ্ত৷
সন্ন্যাসীর দেহ যে দাহ না করার বিধি এটি মূলত তন্ত্রোক্ত ও পুরাণে কথিত। মহানির্বাণতন্ত্রের ৮ম উল্লাসের ২৮৪ শ্লোকে বলা হয়েছে,
সন্ন্যাসিনাং মৃতং কায়ং দাহয়েন্ন কদাচন।
সংপূজ্য গন্ধপুষ্পাদৈঃ নিখনেদ্বাপ্সু মজ্জয়েৎ ॥
অর্থাৎ, সন্ন্যাসীর দেহ কখনোই দাহ করবেনা, বরং গন্ধপুষ্প দ্বারা অর্চিত করে ভূমিতে প্রোথিত করবে বা জলে ডুবিয়ে দেবে।
অতঃ বৈদিক বিধানে মৃতদেহ মৃৎ বা জল সমাধির বিধান কখনোই দৃষ্ট হয়না। তা তান্ত্রিক ও পৌরাণিকদের আদরণীয় হলেও বেদানুকূল ভক্তবৃন্দের অবশ্য পরিত্যাজ্য ।

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর