দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







গোমূত্র ও গোবর তত্ত্ব : বৈদিক ও অবৈদিক গ্রন্থের আলোকে

সত্যান্বেষী
0


 গোমূত্র ও গোবর তত্ত্ব : বৈদিক ও অবৈদিক গ্রন্থের আলোকে

সনাতন ধর্মে গোরুর মাহাত্ম্য নানাভাবে নানা শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও গো মাত্রেই পশুবাচক শব্দ, তারপরেও গোরু অর্থই সব থেকে বেশি প্রচলিত। একটি খুবই আলোচিত প্রশ্ন হলো, সনাতন ধর্মে গোমূত্র বা গোময় [গোবর] সম্পর্কে কী বলা হয়েছে ? 

গোমূত্র ও গোময় তথা গোবরের বিষয়ে চতুর্বেদের ২০৩৭৯ মন্ত্রে সরাসরি কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, গোরুর প্রভূত উপকারিতা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা অবশ্যই করা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে এই দুটি উপাদান সম্পর্কে পৃথক কোনো আদেশ নেই। যদিও কতিপয় ভাষ্যকারের ব্যাখ্যাতে গোরু থেকে প্রাপ্ত উপাদানের সূচিতে গোমূত্র বা গোবর দৃষ্ট হলেও তা সরাসরি বৈদিক আদেশ নয় বিধায় আদরণীয় নয়, পাশাপাশি বেদে গোদুগ্ধেরই 'গব্য' হিসেবে উদাহরণ পাওয়া যায়, গোমূত্র বা গোবর নয়। 


স্মার্তগ্রন্থের মধ্যে মনুস্মৃতিতে গোমূত্র পানের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে তা কেবলই প্রায়শ্চিত্ত প্রকরণে। স্বাভাবিকভাবে প্রায়শ্চিত্ত পাপকর্মের জন্যই করা হয়। সুতরাং তাতে যে অস্বাভাবিক উপাদান থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কেননা দণ্ড মাত্রেই ভয়াবহ। উদাহরণ - মনুস্মৃতির ১১।২১৩ তে বর্ণিত অংশটি মূলত সান্তপনকৃচ্ছ্রব্রত - প্রায়শ্চিত্তপ্রকরণ । যা পুণ্যলাভের আশায় নয় বরং পূর্বকৃত অপরাধের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ করা হয়।

গোমূত্রং গোময়ং ক্ষীরং দধি সর্পিঃ কুশোদকম্ । একবাত্রোপবাসশ্চ কৃচ্ছ্রং সান্তপনং স্মৃতম্ ॥

[মনুস্মৃতি ১১।২১৩]

অনুবাদঃ- গোমূত্র, গোবর, দুধ, দই, ঘি এবং কুশোদক- এগুলি মিশিয়ে একদিন খেয়ে থাকতে হবে[ সেদিন অন্য কিছু খাওয়া চলবে না] এবং পরের দিন উপবাস করতে হবে। স্মৃতিমধ্যে এই ব্রতকেই সান্তপনকৃচ্ছ্র নামে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। 


সুরাপানের প্রায়শ্চিত্তে আছে, 

গোমূত্রমগ্নিবর্ণং বা পিবেদুদকমেব বা। 

পয়ো ঘৃতং বা মরণাদ্ গোশকৃদ্রসমেব বা ॥

[মনুস্মৃতি ১১।৯২]

অনুবাদ: অগ্নির মতো উত্তপ্ত গোমূত্র, জল, দুধ, ঘি, কিংবা গোময়জল ততক্ষণ ধরে পান করতে থাকবে, যতক্ষণ না মরণ হয়।


সুতরাং, মনুস্মৃতির উক্ত শ্লোকে আমরা পুণ্যার্থে গোমূত্রপান নয় বরং কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তরূপ কৃত্য দেখতে পাই। প্রসঙ্গত এই একই বিধান কূর্মপূরাণ উপরিভাগ ৩২।২ ও গরুড় পুরাণ ১।৫২।৮-তেও পাই। এমন অনেক প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপার গৌণ স্মৃতি ও পুরাণে দৃষ্ট হয়। তবে এগুলোকে মূল স্মৃতিতে পুণ্যফলবাচক বলা হয়নি কিংবা প্রোৎসাহিত করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হলো না।


মনুস্মৃতি ৫।১২২-১২৪, ভাগবত ৭।১১।২৬, মহাভারত ১৩।১৪৬, বিষ্ণু স্মৃতি ২৩।৫৬-৫৭, পরাশর স্মৃতি ৬।৪৭-তে গৃহভূমি, শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা সৃষ্টিখণ্ড ১৩।১৮-তে শিবপূজনের স্থান, গোময় দ্বারা লেপনের নির্দেশ রয়েছে। গ্রামীণ বাংলায় অদ্যাবধি এই সংস্কার প্রচলিত। বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১।৫।৮।৫২, বিষ্ণুস্মৃতি ২২।৮৭ গোময়কে শুদ্ধিকারক উপাদান হিসেবে পরিগণিত করে।



▪️পঞ্চগব্য কী?  


যদিও আমরা ভাবি যে কোনো গোরু থেকেই ৫ প্রকার দ্রব্য নিলেই পঞ্চগব্য হবে, তবে গৌণস্মৃতিতে গোরু কেমন হবে ও কতটা পরিমাণে নিতে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। যেমন,


গোমূত্রং গোময়ং ক্ষীরং দধি সর্পিঃ কুশোদকম্।

নিরদ্দিষ্টং পঞ্চগব্যন্তুপবিত্রং পাপনশনম্ ॥

গোমূত্রং কৃষ্ণবর্ণায়াঃ শ্বেতায়া গোময়ং হরেৎ। 

পয়শ্চ তাম্রবর্ণায়া রক্তায়া দধি চোচ্যতে ॥

কপিলায়া ঘৃতং গ্রাহ্যং সর্বং কাপিলমেব বা।

গোমূত্রস্য পলং দদ্যাদ্দধ্নস্ত্রিপলমুচ্যতে ॥

আজ্যস্যৈকপলং দদ্যাদঙ্গুষ্ঠার্দ্ধন্তু গোময়ম্। 

ক্ষীরং সপ্তপলং দদ্যাৎ পলমেকং কুশোদকম্ ॥

পরাশর স্মৃতি ১১।২৭-২৯

অর্থাৎ, গোমূত্র, গোময়, দুগ্ধ, দধি, ঘৃত ও কুশজল-ইহাই ব্রহ্মকুর্চ্চ বলিয়া নির্দিষ্ট আছে, এই পঞ্চগব্য পবিত্রতাজনক ও পাপনাশকারক। কৃষ্ণবর্ণ গাভীর গোমূত্র ও শ্বেতবর্ণ গাভীর গোময় গ্রহণ করিবে, তাম্রবর্ণ গাভীর দুগ্ধ লইবে এবং রক্তবর্ণ গাভীর দধি লইতে হইবে। কপিলবর্ণ গাভীর ঘৃত গ্রহণ করিবে। তবে যদি এই পাঁচ বর্ণের গাভী না পাওয়া যায়, তাহা হইলে কপিলা হইতেই সমস্ত সংগ্রহ করিবে। গোমূত্র এক পল লইবে, দখি তিন পল লইবে, ঘৃত এক পল লইবে, গোময় অর্দ্ধাঙ্গুষ্ঠ পরিমিত লইবে, দুগ্ধ সপ্ত পল লইবে, আর কুশোদক এক পল লইবে।


সমতুল্য তথ্য গরুড়পুরাণের পূর্বখণ্ডের ২২২ অধ্যায়েও দৃষ্ট হয়।


কালিকা পুরাণের ৬৩ তম অধ্যায়ের ১৫ নং শ্লোকে, 

মধুক্ষীরাজ্যদধিভির্গোমূর্ত্রৈর্গোময়ৈস্তথা।

রত্নোদকৈঃ শর্করাভির্গুডরত্নকুশোদকৈঃ॥

অর্থাৎ, “পূজক- মধু, ক্ষীর, দধি,গোমূত্র,গোময়,রত্নোদক,শর্করা, গুড়, রত্ন এবং কুশোদক দ্বারা মূলমন্ত্র উচ্চারণ করে প্রথমে দেবীকে স্নান করাবে।“ এরূপ বলা আছে।


বৃহদ্ধর্ম পুরাণের উত্তরখণ্ডের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে বলা হয়েছে-

গবাং মূত্রং পুরীষঞ্চ পবিত্রং পরমং মতম্ ॥৩৬॥ ক্ষীরং দধি ঘৃতঞ্চৈব ভোজনে হ্যমৃতোপমম্। এতৈর্বিনা ভোজনঞ্চ বৃথাভোজনমিষ্যতে॥৩৭॥ বিশেষতো ব্রাহ্মণস্তু নাগব্যং ভোজনঞ্চরেৎ। উপেক্ষ্যং সর্ব্বমেব স্যান্ন তু গব্যং কদাচন ॥৩৮॥ গোমূত্রং গোময়ং ক্ষীরং দধি সর্পিস্তথোত্তমম্ । পঞ্চগব্যমিদং প্রোক্তং স্নানীয়ং সর্ব্বদৈবতৈঃ ॥৩৯॥

অর্থাৎ, গোমূত্র ও গোবর পরম পবিত্র। দুগ্ধ, দধি ও ঘৃত ভোজনে অমৃত তুল্য , এই সব ছাড়া ভোজন বৃথা ভোজন মধ্যে গণ্য।বিশেষত ব্রাহ্মণ গব্য ছাড়া ভোজন করবে না। অন্য দ্রব্য উপেক্ষা করতে পারে কিন্তু কখনো গব্য উপেক্ষা করবে না। গোমূত্র, গোবর, দুগ্ধ, দধি ও ঘৃত এই কয়েকটিকে পঞ্চগব্য বলে। এগুলো সকল দেবতার স্নানীয় দ্রব্য। [অর্থাৎ, দেব প্রতিমার স্নানে গোমূত্র ও গোবর ব্যবহার করা হবে] 


কালিকা পুরাণের ৫৯ তম অধ্যায়ের ৮২ নং শ্লোকে বলা হয়েছে ,

পবিত্রং মূর্ধ্নি চৈকৈকং দদ্যাদেভ্যঃ সমাহিতঃ।

পঞ্চগব্যচরুং কৃত্বা দেব্যৈ দত্ত্বাহুতিত্রয়ম্॥ 

তেনৈব বিষ্ণবে দত্ত্বা শম্ভবে চ যথাবিধি।

আজ্যৈরষ্টোত্তরশতং তিলৈরাজ্যৈস্তথৈব চ॥

অর্থাৎ, পঞ্চগব্য চরু নির্মাণ করে, তার দ্বারা তিনবার দেবীর হবন করে তথাবিধি বিষ্ণু ও শম্ভুর হবন করবে।


শ্রীমদ্ভাগবতে [১০.৬.১৯-২১] ও অগ্নিপুরাণে [২৯৯.১৯-২৩] শ্রীকৃষ্ণকে গোমূত্র দিয়ে স্নানের ও গোবরের তিলক দানের উল্লেখ পাওয়া যায়, রাক্ষসদের হাত থেকে রক্ষার জন্য ~ গোপীগণ সহ মা যশোদা এবং রোহিণী গোপুচ্ছ ভ্রমণ প্রভৃতি ক্রিয়ার দ্বারা সমস্ত বিঘ্ন থেকে শিশু শ্রীকৃষ্ণের সম্যকভাবে রক্ষা বিধান করেছিলেন। শিশুটিকে গোমূত্র দ্বারা স্নান করিয়ে গোধুলি লিপ্ত করা হয়েছিল। তারপর গোময় দ্বারা ললাট আদি দ্বাদশ অঙ্গে ভগবানের বিভিন্ন নাম লিখে তিলক অঙ্কন করা হয়েছিল। এইভাবে শিশুটির রক্ষা বিধান করা হয়েছিল। [শ্রীল প্রভুপাদের অনুবাদ]


শ্রীল প্রভুপাদের ভাগবত [৮।৮।১১] তাৎপর্যে লিখেছেন,

সমস্ত বৈদিক অনুষ্ঠানে পঞ্চগব্য, অর্থাৎ গাভী থেকে প্রাপ্ত পাঁচটি পদার্থ দুধ, দধি, ঘি, গোময় এবং গোমূত্রের আবশ্যকতা হয়। গোমূত্র এবং গোময় পবিত্র।


বরাহপুরাণ [২০৬.২৮] মতে, পঞ্চগব্য তথা গোমূত্র-গোবরসহ পানে বাজিমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

পঞ্চগব্যেন পীতেন বাজিমেধফলং লভেৎ ।

গব্যং তু পরমং মেধ্যং গব্যাদন্যন্ন বিদ্যতে ॥


কূর্মপুরাণের [উপরিভাগ ৩৩।৩৭-৩৮] মতে, ব্রাহ্মণ যদি চণ্ডালের কূপ থেকে বা তার স্পর্শ করা জল পান করে তবে পঞ্চগব্য তথা গোমূত্র, গোময়াদি ৩ রাত্রি পান করবে।

চাণ্ডালকূপভাণ্ডেষু যদি জ্ঞানাৎ পিবেজ্জলম্ ।

চরেৎ সান্তপনং কৃচ্ছ্রং ব্রাহ্মণঃ পাপশোধনম্ ॥ 

চাণ্ডালেন তু সংস্পৃষ্টং পীত্বা বারি দ্বিজোত্তমঃ ।

ত্রিরাত্রেণ বিশুদ্ধ্যেত পঞ্চগব্যেন চৈব হি ॥



▪️পঞ্চগব্য তথা গোমূত্র, গোময়াদি দ্বারা দেবপ্রতিমা শুদ্ধিকরণ 


পঞ্চগব্যকষায়েণ মৃদ্ভির্ভস্মোদকেন বা।

শৌচং তত্র প্রকুর্বীত বেদমন্ত্র চতুষ্টয়াৎ ॥

মৎস্য পুরাণ ২৬৫।৮

অর্থাৎ, শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে ৪টি মন্ত্রে পঞ্চগব্য দ্বারা পবিত্র করাতে হবে। 


একই বিধান নিম্নলিখিত স্থানেও দৃষ্ট হয়, শিব পুরাণ বায়ব্যসংহিতা ১।৩৩।৩১-৩২

প্রতিষ্ঠাপ্য বিধানেন তল্লিঙ্গং কৃতশোধনম্ ॥ 

পরিকল্প্যাসনং মূর্তিং পঞ্চবক্ত্রপ্রকারতঃ ॥ 

পঞ্চগব্যাদিভিঃ পূর্ণৈর্যথাবিভবসম্ভৃতৈঃ ॥


শিব পুরাণ বিদ্যেশ্বর সংহিতা ১৬।১১১-১২ অনুযায়ী, রবিবারে পঞ্চগব্য দ্বারা করা লিঙ্গের অভিষেক বিশেষ মহত্বপূর্ণ।

আদিবারে পঞ্চগব্যৈরভিষেকো বিশিষ্যতে ।

গোময়ং গোজলং ক্ষীরং দধ্যাজ্যং পঞ্চগব্যকম্॥


অগ্নি পুরাণ ৯১।১ অনুযায়ী, পঞ্চগব্য দ্বারা স্নান পূর্বক শিব, বিষ্ণু, সূর্যাদি দেবতার পূজা করা উচিত। 

অভিষিক্তঃ শিবং বিষ্ণুং পূজয়েদ্ভাস্করাদিকান্।

শঙ্খভের্য্যাদিনির্ঘাষৈঃ স্নাপয়েৎ পঞ্চগব্যকে ॥


অগ্নিপুরাণ ৬০।৬-৭ অনুযায়ী, বাসুদেবাদি প্রতিমা প্রতিষ্ঠার সময় প্রতিমাকে পঞ্চগব্য দ্বারা শুদ্ধ করে তারপর কুশের জল ও তীর্থের জল দিয়ে স্নান করাতে হবে। 

রত্নন্যাসবিধিং কৃত্বা প্রতিমামালভেদ্গুরুঃ।

সশলাকৈর্দ্দর্ভপুঞ্জৈঃ সহদেবৈঃ সমন্বিতৈঃ ॥ 

সবাহ্যন্তৈশ্চ সংস্কৃত্য পঞ্চগব্যেন শোধয়েৎ।

প্রোক্ষয়েদ্দর্ভতোয়েন নদীতীর্থোদকেন চ ॥


অধুনা সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্যকৃত পুরোহিত দর্পণেও, দোলযাত্রায় নিম্নোক্ত মন্ত্রপাঠপূর্বক দেববিগ্রহ স্নানের নির্দেশ বিদ্যমান,

হিরণ্যবর্ণাং হরিণীং সুবর্ণরজতস্রজাম্। 

চন্দ্রাং হিরণ্ময়ীং লক্ষ্মীং জাতবেদো মমা বহ ॥

পঞ্চগব্য (গোময়, গোমূত্র, দধি, দুগ্ধ, ঘৃত এবং কুশোদক) দ্বারা তত্তৎ শোধনীয় মন্ত্র পাঠ করিয়া স্নান করাইবে।


▪️ গোবর দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ 


ব্রহ্মবৈবর্ত [শ্রীকৃষ্ণ জন্ম০ ৭৫।৮৩-৮৪] অনুযায়ী, মাটি, ভস্ম, গোবর ও বালি দিয়ে শিবলিঙ্গ তৈরি করে একবার মাত্র পূজা করলেও শতকল্প স্বর্গবাস হয়।

মৃদ্ভস্মগোসকৃত্পিণ্ডৈস্তথা বালুকয়াঽপি বা ।

কৃত্বা লিঙ্গং সকৃৎপূজ্য বসেৎকল্পশতং দিবি ।


বৃহন্নারদীয় [পূর্বভাগে তথা তৃতীয়পাদে ৭৫।৭৭] পুরাণে শত্রুসৈন্যের ভয় হলে গোবর দিয়ে হনুমানের প্রতিমা বানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তত্রাবলম্বমানাং চ প্রতিমাং গোময়েন তু। 

বামহস্তেন তালাগ্রং দক্ষিণে জ্ঞানমুদ্রিকা ॥


▪️গোমূত্র - গোবর পান, স্নান


গরুড় পুরাণে [পূর্বভাগ ১২৩।১১] ভীষ্মপঞ্চকাদি ব্রত বর্ণনায় বিষ্ণু আরাধনায় - ১ম দিন গোময় (গোবর), ২য় দিন গোমূত্র, ৩য় দিন দুধ, ৪র্থ দিন দই ও ৫ম দিন সম্পূর্ণ পঞ্চগব্য আহারের বিধি দেওয়া হয়েছে।

গোমূত্রং চ দধি ক্ষীরং পঞ্চমে পঞ্চগব্যকম্ ।

নক্তং কুর্যাৎপঞ্চদশ্যাং ব্রতী স্যাদ্ভুক্তিমুক্তিভাক্ ॥


মহাভারতের অনুশাসন পর্বে [৭৮।১৯] বলা হয়েছে, গোভক্তের উচিত প্রতিদিন শরীরে গোবর লাগিয়ে স্নান করা, শুকনো গোবরের উপর বসা। 

গোময়েন সদা স্নায়াৎ করীষে চাপি সংবিশেৎ। 

শ্লেষ্পমূত্রপুরীষাণি প্রতিঘাতং চ বর্জয়েৎ ॥


গোভক্তদের(?) জন্য বিধান বিষ্ণুসংহিতায় [৫০।২২] রয়েছে। বলা হয়েছে, "গোমূত্রেণ স্নায়াৎ" = গোব্রতে গোমূত্র দিয়ে স্নান করবে। 


গোময় বা গোবর দিয়ে স্নানের নির্দেশ আমরা গরুড় পুরাণেও [পূর্বভাগ ৫০।১১] পাই। সেখানে একে 'গবাং হি রজসা প্রোক্তং বায়ব্যং স্নানমুত্তমং' তথা 'বায়ব্য স্নান' বলা হয়েছে। 


সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্যকৃত পুরোহিত দর্পণে, 'বিধানসপ্তমী' ব্রতে কপিলাগাভীর গোবর সংগ্রহ করে যবপরিমিত গোবর খেতে বলা হয়েছে। 


কূর্মপুরাণে [উপরিভাগ ২৭।৩১] বানপ্রস্থীকে কৃষ্ণপক্ষে গোবর খেতে বলা হয়েছে। যদিও এই বিধান বৈদিক শাস্ত্র তথা গৃহ্যসূত্রাদির বিপরীত।

পঞ্চাগ্নির্ধূমপো বা স্যাদুষ্মপঃ সোমপোঽথ বা ।

পয়ঃ পিবেচ্ছুক্লপক্ষে কৃষ্ণাপক্ষে তু গোময়ম্॥


১০৮ উপনিষদের মধ্যে একটি হলো ভিক্ষুকোপনিষদ্ । এতে [৪] বলা হয়েছে, 

অথ হংসা নাম গ্রাম একরাত্রং নগরে পঞ্চরাত্রং ক্ষেত্রে সপ্তরাত্রং তদুপরি ন বসেয়ুঃ । গোমূত্রগোময়াহারিণো নিত্যং চান্দ্রায়ণপরায়ণা যোগমার্গে মোক্ষমেব প্রার্থয়ন্তে ।

অর্থাৎ, হংস নামক ভিক্ষুরা (সন্ন্যাসী, বৌদ্ধ নয়) কেবল গোমূত্র ও গোবর আহার করেন এবং সদৈব চান্দ্রায়ণ ব্রতপরায়ণ হয়ে মোক্ষের প্রার্থনা করেন।


অগ্নিপুরাণে শৈবদের জন্য 'একতত্ত্বদীক্ষাবিধি'র বর্ণনা রয়েছে। শিষ্যের অভিষেক বর্ণনায় অগ্নিপুরাণ [৯০।৭] বলছে, 

শিষ্যং নিবেশ্য পূর্বাস্যং সকলীকৃত্য পূজয়েৎ।

কাঞ্চিকৌদনমৃদ্ভস্মদূর্বাগোময়গোলকৈঃ ॥

অর্থাৎ, শিষ্যের দেহকে কাঞ্জি, ভাত, মাটি, ভস্ম, দুর্বা, গোবর, সরিষা ও দই দিয়ে মেখে স্নান করাতে হবে।



▪️ ধর্ষিতাকেই অভিযুক্তকরণ ও প্রায়শ্চিত্তবিধান 


ধর্মশাস্ত্রগুলোতে [মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী যেগুলোকে বর্জনীয় বললেও, স্মার্ত-পৌরাণিকদের অবশ্য পালনীয়] ধর্ষিতাকেও শুদ্ধিকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অত্রি সংহিতা [১৯৮] ও পরাশর সংহিতা [১০।২৬] অনুযায়ী, যদি কোনো নারী বলপূর্বক হৃতা বা একবার মাত্র উপভুক্তা তথা ধর্ষিত হয় তবে প্রাজাপত্য ব্রত করে শুদ্ধ হবে। 

সকৃদ্ভুক্তা তু যা নারী নেচ্ছন্তী পাপকর্মভিঃ ।

প্রাজাপত্যেন শুধ্যেত ঋতুপ্রস্রবণেন চ ॥


তবে পরাশর সংহিতা যা কিনা কলিযুগের একমাত্র মান্য স্মৃতি বলে অনেকের দাবি, তাতে [১০। ২৫,২৯] নারীর শুদ্ধির জন্য কৃচ্ছ্র সান্তপনের ব্রতের বিধান রয়েছে। গোমূত্র, গোময়, দুগ্ধ, দধি ও ঘৃত এই পঞ্চগব্য ও কুশোদক পান করে এক রাত্রি উপবাস করলেই স্মৃতিমতে কৃচ্ছসান্তপন ব্রত করা হয়।

গোমূত্রং গোময়ং ক্ষীরং দধি সর্পিঃ কুশোদকং ।

একরাত্রোপবাসশ্চ কৃচ্ছ্রং সান্তপনং স্মৃতম্ ।


▪️ শূদ্র বা চণ্ডালের সংস্পর্শে এলে প্রায়শ্চিত্ত 


পরাশরস্মৃতি ৬।৩০-৩৪ = যদি চতুর্বর্ণ চণ্ডালের সংস্পর্শ জল পান করে থাকে তবে ব্রাহ্মণ গোমূত্র ও যব আহার করবে। ব্রাহ্মণের ঘরে চণ্ডাল অবস্থান করলে ব্রাহ্মণ দই,ঘি, দুধের সাথে গোমূত্র মিশিয়ে খাবে।

ভাণ্ডস্থং অন্ত্যজানাং তু জলং দধি পয়ঃ পিবেৎ ।

ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়ো বৈশ্যঃ শূদ্রশ্চৈব প্রমাদতঃ ॥

ব্রহ্মকূর্চোপবাসেন দ্বিজাতীনাং তু নিষ্কৃতিঃ ।

শূদ্রস্য চোপবাসেন তথা দানেন শক্তিতঃ ॥ 

ভুঙ্ক্তেঽজ্ঞানাদ্দ্বিজশ্রেষ্ঠশ্চণ্ডালান্নং কথঞ্চন ।

গোমূত্রয়াবকাহারো দশরাত্রেণ শুধ্যতি ॥ 

একৈকং গ্রাসং অশ্নীয়াদ্গোমূত্রয়াবকস্য চ ।

দশাহং নিয়মস্থস্য ব্রতং তত্তু বিনির্দিশেৎ ॥ 

দধ্না চ সর্পিষা চৈব ক্ষীরগোমূত্রয়াবকম্ ।

ভুঞ্জীত সহ সর্বৈশ্চ ত্রিসন্ধ্যং অবগাহনং ॥ ৬.৩৬ ॥


একই তথ্য অগ্নিপুরাণ ১৭০।১৮-২৫ -

প্রাজাপত্যন্তু শূদ্রাণাং শেষন্তদনুসারতঃ ।

গুণ্ডঙ্কুসুম্ভং লবণং তথা ধান্যানি যানি চ ॥

ব্রতং চান্দ্রায়ণং কুর্যুস্ত্রিরাত্রং শূদ্র এব তু ।

চণ্ডালকূপভাণ্ডেষু অজ্ঞানাৎপিবতে জলং ॥


গরুড় পুরাণ পূর্ব০ ২২২।২,২০-২১

যঃ শূদ্রোচ্ছিষ্টসংস্পৃষ্টং প্রমাদাদ্ভক্ষয়েদ্দ্বিজঃ ।

অহোরাত্রোষিতো ভূত্বা পঞ্চগব্যেন শুধ্যতি ॥

প্রাজাপত্যাদিভির্দ্রষ্টা স্ত্রী শুধ্যেত্তু দ্বিভোজনাৎ ।

উচ্ছিষ্টোচ্ছিষ্টসংস্পৃষ্টংশুনা শূদ্রেণ বা দ্বিজঃ ॥ 

উপোষ্য রজনীমেকাং পঞ্চগব্যেন শুধ্যতি ।

বর্ণবাহ্যেন সংস্পৃষ্টঃ পঞ্চরাত্রেণ বৈ তদা ॥


কূর্মপুরাণ উপরি০ ৩৪।৩৮

চাণ্ডালেন তু সংস্পৃষ্টং পীত্বা বারি দ্বিজোত্তমঃ ।

ত্রিরাত্রেণ বিশুদ্ধ্যেত পঞ্চগব্যেন চৈব হি ॥


তুলনীয় সংবর্তস্মৃতি ৩০, আপস্তম্বস্মৃতি ২।২, আঙ্গিরসস্মৃতি ১।৯-১০, উশন সংহিতা ৯।৪৯। 


▪️রোগের চিকিৎসায় গোমূত্র-গোবর


গরুড় পুরাণ [১।১৭৪।৪১] অনুযায়ী, গোমূত্রের সাথে গুগ্গুল খেলে উরুস্তম্ভ নাশ হয়।

ঊরুস্তম্ভবিনাশায় গোমূত্রেণ চ গুগ্গুলুঃ ॥


অগ্নিপুরাণ [২৮৩।৪০] অনুযায়ী, 'শুণ্ঠীদারুনবাক্ষীরক্কাথো মূত্রান্বিতোঽপরঃ' অর্থাৎ, শুণ্ঠী, দারু, পুনর্নভ, ক্ষীরাদি গোমূত্রে মিশিয়ে পান করলে চুলকানি দূর হয়ে যায়।


অগ্নিপুরাণ [২৮৫।৩৮] অনুযায়ী, হরিতকী গোমূত্রে ভিজিয়ে শুদ্ধ করে তেল ও লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে কফ ও বাতজনিত রোগ দূর হয়। একই পুরাণে [২৮৫।৫৭-৫৮] পাড়, কচুরিপানা, ত্রিকটূ ও ত্রিফলা, চিত্তা এদের একত্রে গোমূত্রে পিষ্ট করে বড়ি বানিয়ে খেলে গুল্ম, প্লীহা রোগ দূর হয়। 

হরিতকীং মূত্রসিদ্ধাং সতৈললবণান্বিতাং ।

প্রাতঃ প্রাতশ্চ সেবেৎ কফবাতাময়াপহাং ॥

পাঠানিকুম্ভত্রিকটুত্রিফলাগ্নিষু সাধিতম্ ।

মূত্রেণ চূর্ণগুটিকা গুল্মপ্লীহাদিমর্দ্দনী ॥


গরুড় পুরাণ [১।১৮১।৪০] অনুযায়ী, দুধ বা কাকজঙ্ঘার রসের সাথে গোবরের রস মিশিয়ে পান করলে বিষমজ্বর দূর হয়। 

দুগ্ধং পীতং তু সংয়ুক্তং গোপুরীষরসেন চ ।

বিষমজ্বরনুৎস্যাচ্চ কাকজন্ধারসস্তথা ॥


হরিবংশ পুরাণে [বিষ্ণুপর্ব ৮০।৬-৮] পার্বতী অরুন্ধতীকে বলছেন, যিনি শিরঃশোভা কামনা করিয়া কৃষ্ণাচতুৰ্দ্দশীতে মস্তকে গোময় অথবা শ্রীফল বিলেপনপূর্ব্বক গোমূত্র প্রদান করিয়া পরিষ্কৃত জলে ধৌত করিবেন এবং গোমূত্র পান করিবেন, তাঁহাকে কদাচ বৈধব্য যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয় না, প্রত্যুত শিরঃরোগও তাঁহাকে উপতাপিত করে না, তিনি বিগতজ্বরা ও সুভগা হইয়া পরমসুখে কালাতিপাত করেন।

শিরো নির্বেষ্টুকামা তু গোময়েন শিরঃ শতী।

প্রক্ষালয়েন্মলং ধাত্র্যা বিল্বেন শ্রীফলেন চ ॥ ৬ ॥

গোমূত্রং চ সদা প্রাশ্যেচ্ছিরঃস্নানং চ মিশ্রয়েৎ।

কৃষ্ণাং চতুর্দশীং ত্বেতৎ কর্তব্যং বরবর্ণিনি ॥ ৭ ॥

ভবত্যবিধবা চৈব সুভগা বিজ্বরা তথা ।

শিরোরোগৈর্নৈব চাস্যাঃ শরীরমভিতপ্যতে॥৮॥


প্রসঙ্গতঃ, শূদ্রের কি পঞ্চগব্যে অধিকার আছে ? 


না, নেই। এটিই স্মার্ত-পৌরাণিক সিদ্ধান্ত। 


আপস্তম্ব স্মৃতি [৫।৪] অনুযায়ী,

পঞ্চগব্যং ন দাতব্যং তস্য মন্ত্রবিবর্জনাৎ।

খ্যাপয়িত্বা দ্বিজানান্ত শূদ্রো দানেন শুধ্যতি॥

অর্থাৎ, শূদ্র পঞ্চগব্য পান করবে না। বরং সে ব্রাহ্মণাদি দ্বিজদের দান করে নিজে শুদ্ধ হবে।


বিষ্ণু স্মৃতি [৫৪।৭] অনুযায়ী,

পঞ্চগব্যং পিবেচ্ছূদ্রো ব্রাহ্মণস্তু সুরাং পিবেৎ ।

উভৌ তৌ নরকং যাতো মহারৌরবসংজ্ঞিতম্ ॥

অর্থাৎ, শূদ্র যদি পঞ্চগব্য ও ব্রাহ্মণ যদি সুরাপান করে তবে তারা মহারৌরব নরকে গমন করে।


গরুড় পুরাণ সারোদ্ধার [৪।২২] "বেদাক্ষরং পঠেচ্ছূদ্রঃ কাপিলং যঃ পয়ঃ পিবেৎ" বেদ পাঠক, কপিলা গাভীর দুধ পানকারী শূদ্রের নরক গমনের তথ্য আমাদের দিচ্ছে [বৈতরণ্যাং পতন্তি তে]।


▪️ঔষধী হিসেবে গোমূত্র 


আয়ুর্বেদে গোরুসহ নানা প্রাণীর মূত্রের বর্ণনা আছে। সুশ্রুত সংহিতায় [সূত্রস্থান|৪৫] ৮ প্রকার প্রাণীর মূত্রের বর্ণনা আছে।


গোমহিষ্যজাবিগজহয়খরোষ্ট্রাণাং মূত্রাণি তীক্ষ্ণানি কটূন্যুষ্ণানি তিক্তানি লবণানুরসানি লঘূনি শোধনানি কফবাতকৃমিমেদোবিষগুল্মার্শউদরকুষ্ঠশোফারোচকপাণ্ডুরোগহরাণি হৃদ্যানি দীপনানি চ সামান্যতঃ ২১৭

ভবতশ্চাত্র

তৎ সর্বং কটূতীক্ষ্ণোষ্ণং লবণানুরসং লঘু

শোধনং কফবাতঘ্নং কৃমিমেদোবিষাপহম্ ২১৮

অর্শোজঠরগুল্মঘ্নং শোফারোচকনাশনম্

পাণ্ডুরোগহরং ভেদি হৃদ্যং দীপনপাচনম্ ২১৯

গোমূত্রং কট তীক্ষ্ণোষ্ণং সক্ষারত্বান্ন বাতলম্

লঘ্বগ্নিদীপনং মেধ্যং পিত্তলং কফবাতনুৎ ২২০

শূলগুল্মোদরানাহবিরেকা স্থাপনাদিষু

মূত্রপ্রয়োগসাধ্যেষু গব্যং মূত্রং প্রয়োজয়েৎ ২২১

দুর্নামোদরশূলেষু কুষ্ঠমেহাবিশুদ্ধিষু

আনাহশোফগুল্মেষু পাণ্ডুরোগে চ মাহিষম্ ২২২

কাসশ্বাসাপহং শোফকামলাপাণ্ডুরোগনুৎ

কটূতিক্তান্বিতং ছাগমীষন্মারুতকোপনম্ ২২৩

কাসপ্লীহোদরশ্বাসশোষবর্চোগ্রহে হিতম্

সক্ষারং তিক্তকটুকমুষ্ণং বাতঘ্নমাবিকম্ ২২৪

দীপনং কটু তীক্ষ্ণোষ্ণং বাতচেতোবিকারনুৎ

আশ্বং কফহরং মূত্রং কৃমিদদ্রুষু শস্যতে ২২৫

সতিক্তং লবণং ভেদি বাতঘ্নং পিত্তকোপনম্

তীক্ষ্ণং ক্ষারে কিলাসে চ নাগং মূত্রং প্রয়োজয়েৎ ২২৬

গরচেতোবিকারঘ্নং তীক্ষ্ণং গ্রহণিরোগনুৎ

দীপনং গার্দভং মূত্রং কৃমিবাতকফাপহম্ ২২৭

শোফকুষ্ঠোদরোন্মাদমারুত ক্রিমিনাশনম্

অর্শোঘ্নং কারভং মূত্রং মানুষং চ বিষাপহম্ ২২৮


অর্থাৎ, গো, মহিষ, ছাগ, মেষ, গজ, অশ্ব, গর্দভ ও উষ্ট্রের মুত্র সাধারণতঃ তীক্ষ্ণ, কটু, উষ্ণ, তিক্ত, লবণানুরস, লঘু, শোধন, কফ বাত কৃমি মেদ বিষ গুল্ম অর্শ উদর কুষ্ঠ শোথ অঙ্কচি ও পাণ্ডুরোগনাশক, হৃদ্য ও দীপন। এই স্থলে কয়েকটী শ্লোক বলিয়া উপ-সংহার করা হইতেছে, যথা ঐ সকল মূত্র কটু, তীক্ষ্ণ, উষ্ণ, লবণানুরস, লঘু, শোধন, কফবাতঘ্ন, কৃমি,মেদ ও বিষনাশক, অর্শ উদর ও গুল্মনাশক, শোথ ও অরুচি-নাশক, পাণ্ডুরোগনাশক, ভেদক, হৃদয়ের পক্ষে হিত, দীপন ও পাচন। 

১। গোমূত্র কটূ, তীক্ষ, উষ্ণ এবং ঈষৎ ক্ষারযুক্ত বলিয়া বায়ুনাশক। ইহা লঘু, অগ্নিদীপক, মেধ্য, পিত্তকারক ও কফবাতনাশক। শূল, গুল্ম, উদর, আনাহ, বিরেচন ও আস্থাপনাদি মূত্রপ্রয়োগ-সাধ্য হইলে সে স্থলে গোমূত্রই প্রয়োগ করিবে। 

২। অর্শ, উদর ও শূলে এবং কুষ্ঠ ও মেহ রোগের অশুদ্ধ অবস্থায় বমনাদি প্রয়োগ করিতে হইলে এবং আনাহ, শোখ, গুল্ম ও পাণ্ডুরোগে মূত্রপ্রয়োগ আবশ্যক হইলে মহিষীর মূত্র দিবে।  

৩। ছাগীর মূত্র কাসশ্বাসনাশক, শোষ কামলা ও পাণ্ডুরোগনাশক, কটূ ও তিক্ত এবং ঈষৎ বায়ু-কারক। 

৪।মেষ মূত্র কাস, প্লীহা, উদর, শ্বাস, শোষ ও বিষ্ঠা বন্ধে হিতকর। ইহা ঈষৎ ক্ষার, তিক্ত, কটু, উষ্ণ ও বাতঘ্ন। 

৫। অশ্বমূত্র দীপন, কটূ, তীক্ষ্ণ, উষ্ণ, বায়ুনাশক, চিত্তবিকারনাশক, কফহারক এবং কৃমি ও দদ্ররোগে প্রশস্ত। 

৬। হস্তিমূত্র ঈষৎ তিক্ত, লবণ, ভেদক, বাতঘ্ন, পিত্তকোপন ও তীক্ষ্ণ। ইহা ক্ষারকর্ম ও কিলাসরোগে ব্যবহার করিতে হয়। 

৭। গর্দভমূত্র গরদোষনাশক, চিত্তবিকারনাশক, তীক্ষ্ণ, গ্রহণীরোগনাশক, দ্রীপন, কৃমিনাশক এবং বাতকফনাশক।

৮। উটমূত্র শোথ, কুষ্ঠ, উদর, উন্মাদ, বায়ু ও কৃমি নাশ করে। ইহা অর্শোঘ্ন।  

আর শেষে বলা, মানুষ-মূত্র বিষনাশক।


প্রসঙ্গতঃ, আয়ুর্বেদের মূখ্যকর্ম দ্রব্যগুণ বর্ণনা। বিহিত-অবিহিত দুই প্রকার উপাদানই আয়ুর্বেদে পাওয়া যায়। তবে শাস্ত্রানুকূল কোনটি তার নির্ণীত হবে ধর্মশাস্ত্র দ্বারা। আয়ুর্বেদ একটি ক্রমবিকাশমান শাস্ত্রও বটে। তাই একে অভ্রান্ত ও নিত্য ধরে ধর্মীয় সিদ্ধান্ত ভাবা ও সমালোচনা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ - 

১। মানব নারীর দুধ ও তার দইয়ের উপকারিতা -চরক০ সূত্র০ অ০ ২৭.২২১-২২৪।

২। গোমাংসের উপকারিতা - চরক০ সূত্র০ অ০ ২৭.৮১

৩। উন্মাদের চিকিৎসায় কুকুর ও গোমাংসের ধূপ [ সু০ স০ উত্তরতন্ত্র ৬২.১৬/ বাংলায় শ্লোক ৮]

৪। ছাগলের অণ্ডকোষ খেয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি - সু০ স০

চিকিৎসা স্থান ২৬.৪ 


উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম, বৈদিক শাস্ত্রে গোমূত্র বা গোবরের এতোটা মাহাত্ম্য খ্যাপন করা হয়নি যা পরবর্তীযুগের গৌণস্মৃতি বা পুরাণাদিতে আছে । গোবোরের ব্যবহার গৃহস্থালিতে লেপনের ঐতিহ্য প্রাচীন ও ধর্মীয়সিদ্ধান্তও না, সেই হিসেবে সমালোচনাযোগ্যও না। গোমূত্রও প্রায়শ্চিত্তাদিতেই বিহিত হয়েছিলো এবং অত্যন্ত গুরুতর পাপেই। শাস্তিতে তীব্রতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই গোমূত্র বা গোবরের অলৌকিক বা অতিমাহাত্ম্য সনাতন ধর্মের নির্দিষ্ট অংশ নয়, তাই এই বিষয়ে সমালোচনা ও সংশ্লিষ্টতা সনাতন ধর্মকে আহত করে না বরং গবেষণা সাপেক্ষেই গ্রহণ করা উচিত। গো এবং গবাদি পশু পালনীয় ও রক্ষণীয়, সর্বপ্রাণীকে যেমন আমরা শ্রদ্ধা করি তারাও শ্রদ্ধার পাত্র। প্রাণীমাত্রই সেবা করা সনাতন ধর্মাবলম্বীর ভূতযজ্ঞের অবশ্য কর্তব্য। 


🖋️ শ্রী দীপংকর সিংহ দীপ

ব্যাকরণ - বেদান্ত - স্মৃতি - পৌরহিত্যতীর্থ 

শিক্ষা ও শাস্ত্রার্থ সমন্বয়ক 

চিত্র: অর্ণব কুমার মণ্ডল 

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)