মমেদসস্ত্বং কেবলো নান্যাসাং কীর্তয়াশ্চন ॥ [অথর্ববেদ ৭.৩৮.৪]
মৃদুর্নিমন্যুঃ কেবলী প্রিয়বাদিন্যনুব্রতা ॥ [অথর্ববেদ ৩.২৫.৪]
এমন নানা মন্ত্রে 'কেবলো,কেবলী' শব্দের মাধ্যমে 'দম্পতি = একজন স্বামী ও একজন স্ত্রী' অত্যন্ত সুন্দরভাবে বোঝা যায়।
১. জায়েব পত্য উশতী সুবাসা উষা হস্রেব নি রিণীতে অপ্সঃ ॥ [ঋগ্বেদ ১.১২৪.৭]
২. অয়ং যোনিশ্চকৃমা যং বয়ং তে জায়েব পত্য উশতী সুবাসাঃ। [ঋগ্বেদ ৪.৩.২]
৩. উতো ত্বস্মৈ তন্বং বি সস্রে জায়েব পত্য উশতী সুবাসাঃ ॥ [ঋগ্বেদ ১০.৭১.৪]
এখানে, 'জায়া' ও 'পত্যে' একবচনের প্রয়োগ 'এককবিবাহ'-এর আদর্শেরই প্রতিপাদন করে।
দেবো ন যঃ পৃথিবীং বিশ্বধায়া উপক্ষেতি হিতমিত্রো ন রাজা।
পুরঃসদঃ শর্মসদো ন বীরা অনবদ্যা পতিজুষ্টেব নারী ॥
[ঋগ্বেদ ১.৭৩.৩]
অর্থাৎ, হে মানবগণ! তোমাদের উচিত সর্বদা সেই দেবসুখদাতা ঈশ্বরকে ভক্তি ও সন্মান দিয়ে উপাসনা করা, যিনি আমাদের সমর্থন দেন এবং আমাদের পৃথিবীর জীবনে একতা রাখেন, যিনি সবার পালনকর্তা যেমন সূর্য পালন করে, এবং যিনি রাজা-সদৃশ প্রজাদের কল্যাণ সাধনকারী বন্ধু। সত্যিকার ও স্থায়ী সুখের স্বাদ শুধুমাত্র সেই সাহসী ব্যক্তিরাই পান, যারা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মুখীন হবার মর্যাদা অনুভব করে। যাঁরা ঈশ্বরকে সে মন ও আত্মার সঙ্গে পূজা করে, ঠিক যেমন এক সুগুণী, শিক্ষিত, অপরাজেয় চরিত্রের স্ত্রী তার স্বামীকে দেহ, মন ও প্রাণ দিয়ে নিবেদিত করে তারা সর্বোচ্চ আনন্দের অধিকারী হয়।
গাব ইব গ্রামং যূয়ুধিরিবাশ্বান্বাশ্রেব বৎসং সুমনা দুহানা ।
পতিরিব জায়ামভি নো ন্যেতু ধর্তা দিবঃ সবিতা বিশ্ববারঃ ॥
[ঋগ্বেদ ১০.১৪৯.৪]
এখানে 'জায়াম্' ও 'পতিঃ' একবচনেই। যদিও কেবল উপমা কিংবা বচনমাত্রেই আমরা প্রমাণ হিসেবে একচ্ছত্র গ্রহণে জোর দেই না, তবে এটা সুস্পষ্ট যে বিবাহসংস্কার, স্বাভাবিক গার্হস্থ্যাশ্রম, কর্তব্যনিষ্ঠার উপদেশ সর্বত্রই 'একবিবাহ' প্রমাণিত করে, বহুবিবাহ নয়।
১. আ রোহ সূর্যে অমৃতস্য লোকং স্যোনং পত্যে বহতুং কৃণুষ্ব ॥[২০]
২. সমর্যমা সং ভগো নো নিনীয়াৎসং জাস্পত্যং সুয়মমস্তু দেবাঃ ॥ [২৩]
৩. ঋতস্য যোনৌ সুকৃতস্য লোকেঽরিষ্টাং ত্বা সহ পত্যা দধামি ॥ [২৪]
সুস্পষ্টভাবে একবিবাহের প্রমাণ। এর বাইরেও,
ইহৈব স্তং মা বি যৌষ্টং বিশ্বমায়ুর্ব্যশ্নুতম্ ।
ক্রীডন্তৌ পুত্রৈর্নপ্তৃভির্মোদমানৌ স্বে গৃহে ॥
ঋগ্বেদ ১০.৮৫.৪২
অর্থাৎ, হে স্বামী ও পত্নী! তোমরা গৃহে একত্র মিলিত হয়ে এখানেই বসবাস করো। কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ো না। সন্তান ও পৌত্রাদি সহ আনন্দে, ক্রীড়ায় ও উৎসবে জীবন কাটাও, পরিপূর্ণ আয়ু ভোগ করো এবং দুজনে গার্হস্থ্য জীবনের সম্পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করো।
মন্ত্রে স্তং, যৌষ্টং, ক্রীডন্তৌ, মোদমানৌ - সকল পদ দ্বিবচনে অর্থাৎ এখানে এক পতি ও এক পত্নীই মূল সংস্কার ও শিক্ষায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
১. সমঞ্জন্তু বিশ্বে দেবাঃ সমাপো হৃদয়ানি নৌ ।
সং মাতরিশ্বা সং ধাতা সমু দেষ্ট্রী দধাতু নৌ ॥
[ঋগ্বেদ ১০.৮৫.৪৭]
২. অক্ষ্যৌ নৌ মধুসঙ্কাশে অনীকং নৌ সমঞ্জনম্।
অন্তঃ কৃণুষ্ব মাং হৃদি মন ইন্নৌ সহাসতি ॥
[অথর্ববেদ ৭.৩৬.১]
এখানে 'নৌ' মন্ত্রে দুইবার প্রয়োগ হয়েছে যা দ্বিবচন নির্দেশ করা। অর্থাৎ বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই বেদ এককবিবাহই সমর্থন করে। অথর্ববেদের বিবাহবিষয়কসূক্তের নিম্নোক্ত মন্ত্রেই এটি স্পষ্ট,
ইহেমাবিন্দ্রসং নুদ চক্রবাকেব দম্পতী।
প্রজয়ৈনৌ স্বস্তকৌ বিশ্বমায়ুর্ব্যশ্নুতাম্॥
[অথর্ববেদ ১৪.২.৬৪]
অর্থাৎ, হে দীপ্তিমান প্রভু! আপনি যেন এই দুইজন অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের প্রতি চক্রবাক পক্ষীর মতো প্রেমময় বন্ধনে উদ্বুদ্ধ করেন। তারা যেন সুন্দর বাসভবনে সন্তানসহ তাদের পূর্ণ জীবনকাল সুখে কাটায়।
১. স্যোনা ভবশ্বশুরেভ্যঃ স্যোনা পত্যে গৃহেভ্যঃ।
স্যোনাস্যৈ সর্বস্যৈ বিশে স্যোনাপুষ্টায়ৈষাং ভব ॥
[অথর্ববেদ ১৪.২.২৭]
অর্থাৎ, হে স্ত্রী! শ্বশুর ও অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি নম্র ও ভদ্র হও, স্বামীর প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ এবং পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি সহৃদয় ও সদালাপী হও। পরিবারের সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো, এবং এই পুরো পরিবার ও পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য ও উন্নতির জন্য কল্যাণকর হও।
২. আশাসমানাসৌমনসং প্রজাং সৌভাগ্যং রয়িম্।
পত্যুরনুব্রতা ভূত্বা সংনহ্যস্বামৃতায় কম্ ॥
[অথর্ববেদ ১৪.১.৪২]
অর্থাৎ, হে নববধূ! মনোমুগ্ধকর আনন্দ, উত্তম সন্তান, সৌভাগ্য ও জীবনধনের আশায় ও পরিকল্পনায়, জীবনের সুখ অর্জনের উদ্দেশ্যে তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গে এক অভিন্ন লক্ষ্য ও শৃঙ্খলায় যুক্ত হয়েছো। এখন নিজেকে প্রস্তুত করো এবং তোমার স্বামীর সঙ্গে মিলিতভাবে এই যৌথ যাত্রা শুরু করো যেখানে জাগতিক আনন্দের সঙ্গে আত্মার অমর মুক্তিও অর্জিত হবে।
৩. ইয়ং নার্যুপব্রূতে পূল্যান্যাবপন্তিকা।
দীর্ঘায়ুরস্তু মে পতির্জীবাতি শরদঃ শতম্॥
[অথর্ববেদ ১৪.২.৬৩]
অর্থাৎ, এই নববধূ, পবিত্রতার সঙ্গে লাজাহুতি অর্পণ করে এবং মনপ্রাণ দিয়ে পারিবারিক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে বলে, “আমার স্বামী যেন শতবর্ষব্যাপী পূর্ণ, সুখী ও দীর্ঘ জীবন লাভ করেন।”
প্র ত্বা মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাদ্যেন ত্বাবধ্নাৎসবিতা সুশেবঃ।
ঋতস্য যোনৌ সুকৃতস্য লোকেঽরিষ্টাং ত্বা সহ পত্যা দধামি ॥
[ঋগ্বেদ ১০.৮৫.২৪]
দেবস্তে সবিতাহস্তং গৃহ্ণাতু সোমো রাজা সুপ্রজসং কৃণোতু।
অগ্নিঃ সুভগাং জতবেদাঃপত্যে পত্নীং জরদষ্টিং কৃণোতু ॥
[অথর্ববেদ ১৪.১.৪৯]
মমেয়মস্তুপোষ্যা মহ্যং ত্বাদাদ্বৃহস্পতিঃ।
ময়া পত্যা প্রজাবতি সং জীব শরদঃশতম্ ॥
[অথর্ববেদ ১৪.১.৫২]
কিয়তী যোষা মর্যতো বধূয়োঃ পরিপ্রীতা পন্যসা বার্যেণ।
ভদ্রা বধূর্ভবতি যৎসুপেশাঃ স্বয়ং সা মিত্রং বনুতে জনে চিৎ ॥
[ঋগ্বেদ ১০.২৭.১২]
সং মা তপন্ত্যভিতঃ সপত্নীরিব পর্শবঃ ।
নি বাধতে অমতির্নগ্নতা জসুর্বের্ন বেবীয়তে মতিঃ ॥
অর্থাৎ, এই দিক ও ওই দিক থেকে ঝোড়ো বাতাস (মানসিক যন্ত্রণাস্বরূপ কষ্ট) আমাকে পীড়িত করছে, যেমন সপত্নীরা (সহস্ত্রীরা) করে থাকে।
এই উপমা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বহুবিবাহের দুঃখদায়ক ফল প্রকাশ করছে। এখানে কোথাও একাধিক স্বামীর বা স্ত্রী-পরিবর্তনের অনুমোদন নেই, বরং বহুপত্নীত্ব যে যন্ত্রণাদায়ক ও নিন্দনীয়, তা নির্দেশিত হয়েছে।
উভে ধুরৌ বহ্নিরাপিব্দমানোঽন্তর্যোনেব চরতি দ্বিজানিঃ ।
বনস্পতিং বন আস্থাপয়ধ্বং নি ষূ দধিধ্বমখনন্ত উৎসম্ ॥
অর্থাৎ, যেমন হ্রেষাধ্বনিময় ঘোড়া দুই ধুরার মাঝখানে চেপে বন্দী হয়ে থাকে এবং অবাধে চলতে পারে না, তেমনি দুই স্ত্রীর স্বামীও দুপাশে চাপে, পরাধীন হয়ে যায়।
এই উপমা দ্বারা বেদ স্পষ্ট জানিয়েছে যে একাধিক স্ত্রী-গ্রহণ মানুষকে দুঃখ ও দাসত্বে নিমজ্জিত করে। সুতরাং একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করা অনুচিত।
তবে বিশেষ “আপদ্ধর্ম” বা জরুরি পরিস্থিতিতে বেদে যেমন বিধবাবিবাহ বা নিয়োগ বিধান আছে। একেও সরাসরি বিবাহ বলা যায় না বরং আপদ্ধর্মই সংজ্ঞা প্রদান শ্রেয়। তাই বেদে বহুবিবাহ অনুমোদিত নয়।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সুস্পষ্ট হয় যে বৈদিক আদর্শ একবিবাহ, এবং সকলেরই সেটিকে আদর্শরূপে গ্রহণ করা উচিত। সব দিক বাদ দিয়ে কেবল পূর্বাগ্রহ যুক্ত হয়ে কিছু ক্রিয়া বা বিশেষ্যর একবচন বা বহুবচন দেখে অর্থ নির্ণয় করা বুদ্ধিসম্মত নয়; কারণ উপমা সর্বদাই আংশিক (একদেশী) হয়, আর আদর্শ সর্বদাই প্রকৃত সংস্কার ও ব্যাখ্যায় প্রযোজ্য হয়।
সপত্নীং মে পরা ধম পতিং মে কেবলং কুরু ॥
[ঋগ্বেদ ১০.১৪৫.২]
অর্থাৎ, হে দেব! আমার সপত্নীকে দূর করো, আমাকে একমাত্র করো।
এ ধরনের বহু মন্ত্রে সপত্নীর বিনাশের প্রার্থনা আছে। কিন্তু এখানে 'সপত্নী' শব্দের প্রকৃত তা পর্য হল অবিদ্যা, আর 'একমাত্র পত্নী' মানে ব্রহ্মবিদ্যা। এই সূক্তের দেবতা 'উপনিষৎ-সপত্নী-বাধনম্' অর্থাৎ অবিদ্যার নাশক ব্রহ্মবিদ্যা। জ্ঞানী মানব ব্রহ্মবিদ্যার স্বামী হয়ে অবিদ্যাকে বিনষ্ট করুক এই প্রার্থনাই আসল অর্থ।
উত্তর: সনাতন ধর্ম ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে না। রাজা দশরথের ৩ পত্নী আমরা দেখছি কিন্তু শ্রীরামচন্দ্রের ১৪ বছরের বনবাস দেখছি না, দ্রৌপদীর ৫ পতি দেখছি কিন্তু মহাভারত যুদ্ধ আমরা দেখছি না। দ্রৌপদীর ৫ পতি যদি স্বাভাবিকই হতো তবে শিবের বর কিংবা পঞ্চইন্দ্রের কাহিনীর দরকার পড়তো কি প্রক্ষেপকদের? আমরা এসব ব্যক্তিক্রমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও তখনকার ধর্মীয় অবস্থার ব্যাপারে সম্পূর্ণ জ্ঞাত হতে পারি না। তাই গৌতম ধর্মসূত্র [১.১.৩-৪] অনুযায়ী, 'দৃষ্টো ধর্মব্যতিক্রমঃ সাহসং চ মহতাম্, অবরদৌর্বল্যাৎ' অর্থাৎ মহাপুরুষদের কর্মে ধর্মের বিধানের ব্যতিক্রম দেখা গেলেও সাধারণের তা আচরণীয় নয়।
উত্তর: দেখ, মনু মহারাজ কী বলেছেন—
যেনাস্য পিতরাে যাতা যেন যাতাঃ পিতামহাঃ।
তেন যাযাৎসতাং মার্গং তেন গছন্ন রিষ্যতে ॥ মনু০ [৪।১৭৮]
অর্থ - যে পথে পিতা এবং পিতামহ গমন করেছেন সেইপথে সন্তানও গমন করবে। কিন্তু ‘সতাম্’= যদি পিতা এবং পিতামহ সৎপুরুষ হন তবে তাদের পথে চলবে এবং যদি পিতা, পিতামহ দুষ্ট হয় তবে তাদের পথে কখনও চলবে না । কারণ সৎপুরুষ ও ধর্মাত্মা পুরুষদের পথে চললে কখনও দুঃখ হয় না ।
- সত্যার্থ প্রকাশ, ৪র্থ সমুল্লাস
‘যান্যস্মাকং সুচরিতানি তানি ত্বয়োপাস্যানি নো ইতরাণি।’ এটি তৈত্তিরীয়োপনিষদের [ ১।১১] বচন ।
এর অভিপ্রায়, মাতা, পিতা ও আচার্য নিজ সন্তান ও শিষ্যদেরকে সর্বদা সত্য উপদেশ দিবেন এবং এও বলবেন -আমাদের যা যা ধৰ্মসঙ্গত কৰ্ম আছে সেগুলি গ্রহণ করবে এবং যা যা দুষ্ট কর্ম সেগুলো পরিত্যাগ করবে। যা সত্য বলে জানবে তা প্রকাশ ও প্রচার করবে, কোন পাষণ্ড ও দুষ্টাচারী মানুষকে বিশ্বাস করবে না।
- সত্যার্থ প্রকাশ, ২য় সমুল্লাস
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর

অসাধারণ । দাদা আমি বেদ অধ্যায়ন কালে এতে একটি ভীষণ গভীর অর্থ যুক্ত বৈজ্ঞানিক উক্তি পেয়েছি, যা আপনারা আপনাদের বৈদিক বিজ্ঞান পোস্ট এ লিখেন নি। আমি আপনাদের এটি share করতে চাই কিভাবে করব। এটি সামবেদ ঐন্দ্র পর্বের অন্তর্ভুক্ত।এই মন্ত্রে ব্ল্যাক হোল, মহা বিশ্বের ঘূর্ণন, মহাকর্ষ বল, পৃথিবীর চেপ্টা আকৃতি, মহাবিশ্বের প্রসারণ এই সব বলা আছে। আপনাদের স্যাথে যুগাযোগ করব কিভাবে?
ReplyDelete